মুহাম্মদ ফয়সুল আলম: বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে কর্মসংস্থান শুধু দেশের বেকারত্ব হ্রাসই করে না, একই সঙ্গে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের প্রেরণকৃত রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও কর্মী পাঠানো বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বাংলাদেশি কর্মী গমন শুরু হয়। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা নিজের ভাগ্য বদলাতে চাকরি করতে বিদেশ যান। দেশের জন্য বয়ে আনেন বৈদেশিক মুদ্রা। আর অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে পাড়ি দিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। অনেকে যৌন, শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন। অভিবাসী নারী শ্রমিকদের কর্মস্থলে এভাবেই নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করতে হয়।
বহুকাল আগে থেকেই অধিক উপার্জন আর উন্নত জীবন-জীবিকার আশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও প্রবাসের বিভিন্ন কর্মে নিজেদের নিয়োজিত করে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর শ্রম অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিপুল জনগোষ্ঠীর এই দেশের শ্রমবাজারে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখেরও বেশি নারী ও পুরুষ কর্মী যুক্ত হচ্ছে। তার তুলনায় কর্মসংস্থানের হার একেবারে কম। তাই এর বিরাট একটি অংশ প্রতি বছর কর্মহীন হয়ে পড়ে। কর্মহীন থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজে নানারকম সমস্যার সূত্রপাত হয়। তখন আমাদের এক রকম বাধ্য হয়েই ভাবতে হয় শ্রম অভিবাসনের কথা। যদিও স্বাধীনতার পরপরই আমাদের দেশের নারীরা দেশের অভ্যন্তরে নানা কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে পারিবারিক সচ্ছলতা ও দেশের অর্থনীতিতে নিরন্তর অবদান রাখা শুরু করেছে। অনেক আগেই বাংলাদেশের নারী কর্মীদের শ্রম অভিবাসন শুরু হয়েছিল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের নারীরা সরাসরি শ্রম অভিবাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশে নারী কর্মী পাঠানো শুরু করে। বাংলাদেশের নারী কর্মীদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের হার কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। আবার কখনো বন্ধ হয়ে ফের চালু হয়েছে। নারী কর্মী প্রেরণের এই উত্থানপতনের ধারায় বাংলাদেশ সরকার প্রায় ২০-২৫টি দেশে নারী কর্মী বিদেশে চাকরির জন্য প্রেরণ করেছে। আমরা তাদের শ্রমঘামের রেমিট্যান্সও পেয়েছি প্রচুর। তাদের রেমিট্যান্সই আমাদের বিকাশমান অর্থনীতিকে দেখিয়েছে নতুন গতিপথ।
বাংলাদেশের নারী কর্মীদের শ্রম অভিবাসনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রথম দিককার ইতিহাস অতটা সুখকর ছিল না। তখন যেসব নারী কর্মী বিদেশে যেতেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন অদক্ষ। তাদের অনেকেই দেশের অভ্যন্তরে কোনো নিয়মিত চাকরি বা কর্মে নিযুক্ত ছিলেন না। তাদের অনেকে সমাজ সংসারের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে পরিবারের হাল ধরার আশায় বাধ্য হয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশের মাটিতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কর্মস্থলে হাসিমুখে কাজ করে গেছেন। আর হাসি ফুটিয়েছেন দেশে রেখে যাওয়া অসহায় পরিবারের মুখে। বীরত্বের সঙ্গে নিজ কর্মস্থলে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। প্রশংসাও পেয়েছেন প্রচুর। আপন করে নিয়েছেন বিদেশকে, আপন হয়েছেন বিদেশের মানুষের। অর্জিত অর্থে দেশে গড়েছেন স্বপ্নের সিঁড়ি। সেই সিড়ি বেয়ে এগিয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি। প্রতিবেশীর কাছে হয়েছেন অনুকরণীয় উদাহরণ।
সফল হোন আর বিফল হোন এরা কারও না কারও মা-বোন। ব্যর্থ হলেও তারা কেউ ফেলনা নয়। তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের জন্য দায় বা বোঝা নয় বরং তারা বাংলাদেশের মানবসম্পদ। সরকার তাদের এভাবেই মূল্যায়ন করে। তাই সরকার তাদের প্রেরিত অর্থ আর অর্জিত মেধা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে উৎসর্গ করতে চায়। এ লক্ষ্যে সরকারের সমাজ কল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রত্যাগত নারী কর্মীদের পুনর্বাসনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার মাধ্যমে প্রত্যাগত নারী কর্মীদের সবধরনের সামাজিক নিরাপত্তাসহ দেশেই সম্মানজনক কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে। সরকার ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আইন-২০১৮ নামে একটি আইন পাস করেছে। এতে বলা আছে ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড বিদেশে কর্মরত কোনো নারী অভিবাসী কর্মী নির্যাতনের শিকার, দুর্ঘটনায় আহত, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বিপদগ্রস্ত হলে তাদের উদ্ধার ও দেশে আনয়ন, আইনগত ও চিকিৎসাগত সহায়তা নিশ্চিত দেয়া। এছাড়া দেশে প্রত্যাগত নারীকর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং দেশে-বিদেশে সেফহোম ও হেল্প ডেস্ক পরিচালনা করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকার নতুন করে হংকং, জর্ডান, লেবানন, ওমানসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বিভিন্ন সেক্টরে নারীকর্মী প্রেরণের কার্যক্রম সংক্রান্ত চুক্তি করেছে। অন্যান্য দেশেও নারী কর্মী প্রেরণের জন্য বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিস্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পুরুষ কর্মীর তুলনায় নারী কর্মীর শ্রম অভিবাসন একটু কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। সিডও সনদের ১১.৫নং ধারায় অভিবাসী নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা সম্পর্কে বলা আছেÑস্বাক্ষরকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নারীকর্মীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার নারীকর্মীদের নিরাপদ, নিয়মিত ও নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমনÑগৃহকর্ম পেশায় বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মক্ষম নারী কর্মীদের বয়স ২৫-৩৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের কমপক্ষে তৃতীয় শ্রেণি পাস হতে হবে, যেন তারা নাম, মোবাইল ফোন নম্বর লিখতে পারে। তাদের স্ক্রিনিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তাদের সমস্যা ও অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিএমইটিতে অভিযোগ সেল গঠন, মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোয় অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রবাসবন্ধু কলসেন্টার চালু করাসহ বিদেশস্থ ৩০টি শ্রমকল্যাণ উইং সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা ও ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে চারটি সেফ হোম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হাউস কিপিং কোর্সের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা আরও সহজতর ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ই-লার্নিং প্রশিক্ষণের আওতায় মোবাইল অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। গৃহকর্ম পেশা ব্যতীত আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে গার্মেন্ট ট্রেডে ৩৭টি টিটিসিতে ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অসুস্থ নারী কর্মীদের সংশ্লিষ্ট দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি প্রয়োজনে দেশে ফেরত এনে চিকিৎসা করা এবং এ খাতে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দেয়া হচ্ছে। বিদেশে নারী কর্মীদের অভিবাসন নিরাপদ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ নারী কর্মী পাঠানোর জন্য অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্টের প্রাক-যোগ্যতা হিসেবে ওই রিক্রুটিং এজেন্টের অতীত কার্যক্রম, সুনাম, বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যাসহ অন্যান্য বিষয়কে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাছাড়া নারী কর্মীদের সুরক্ষায় নারী কর্মী পাঠানোর অনুমোদনপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্টের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা জামানত রাখা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের ৪২টি জেলায় বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের সেবা সহজ করার লক্ষ্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ফলে ওই ৪২ জেলার কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ঢাকায় আসার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া কর্মীদের সঠিক পন্থায় বিদেশ গমন এবং গন্তব্য দেশের আবহাওয়া, কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যবিধি, আইন-কানুন/বিধি-বিধান, করণীয় বা বর্জনীয়, বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ, উপার্জিত অর্থের সঠিক বিনিয়োগ প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা প্রদানের জন্য ৬০টি টিটিসি ও ছয়টি আইএমটিতে প্রি-ডিপারচার ট্রেনিং (পিডিটি) পরিচালনা করার পাশাপাশি অনলাইনে ভিসা চেকিং সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে কভিড-১৯ মহামারিকালে বিদেশ প্রত্যাগত নারী অভিবাসী কর্মীদের পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার মেয়াদকাল ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য বিদেশ প্রত্যাগত নারী কর্মীদের পুনর্বাসন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তকরণে সহায়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পরিবারের টেকসই উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনয়ন, সন্তানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, বিদেশে অর্জিত দক্ষতা জ্ঞান কাজে লাগানো এবং সাইকো সোশ্যাল সাপোর্টের সুযোগ সৃষ্টি করা। এই কর্মসূচি তাদের অধিক পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবে। দেশে ফেরত আসার পর দেশের কর্মসংস্থানের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়া তাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের কর্মসংস্থানের সঙ্গে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের মনঃসামাজিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হবে। এ কর্মসূচিতে তথ্য যাচাই-বাছাই, চূড়ান্তকরণ, প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ করার পাশাপাশি এককালীন প্রণোদনা প্রদান করা হয়। এরই মধ্যে কভিড-১৯ মহামারিকালে ৬২ জেলার বিদেশ প্রত্যাগত ৯৫০ নারী অভিবাসী কর্মীকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে (সূত্র: প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর)। প্রবাসী বাংলাদেশি নারী কর্মীদের দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা কর্তৃক অপারগতা প্রকাশ অথবা খরচ বহনে আর্থিক অসামর্থ্যরে কারণে তাদের দেশে ফেরত আনার খরচ কল্যাণ বোর্ড বহন করে থাকে। এর বাইরেও প্রতি অর্থবছর নারী কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের বোর্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।
বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ শাখার মাধ্যমেও জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার কাজ চলছে। প্রত্যাগত নারী কর্মীরা বিমানবন্দরে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে মেডিকেল সুবিধাসহ নানা সহায়তা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। আর সবার জন্য রয়েছে বিপদের সাথী ২৪ হটলাইন প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার যার নাম্বার (+৮৮ ০১৭৮৪ ৩৩৩ ৩৩৩, +৮৮ ০১৭৯৪ ৩৩৩ ৩৩৩ এবং +৮৮ ০২-৯৩৩৪৮৮৮)। কোনো রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া অভিবাসী নারী কর্মীদের সেবা প্রদানের জন্য বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে শ্রমকল্যাণ উইংয়ের সংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৩০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। অসচ্ছল প্রবাসী কর্মীর সন্তানকে শিক্ষিত জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে তাদের মেধাবী সন্তানদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে ২০১২ সাল থেকে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি অথবা সমমান ক্যাটেগরিতে দেয়া হচ্ছে।
সৌদি আরব নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের একটি বড় শ্রমবাজার এবং ভ্রাতৃৃপ্রতিম মুসলিম দেশ। সে জন্য আমাদের শ্রমিকরাও সেখানে যেতে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আমরা সৌদি আরবকে যে শ্রদ্ধার অবস্থানে রেখেছি নিশ্চয় সৌদি আরব সে সম্মানের মূল্যায়ন করবে। এতে দুই দেশই লাভবান হবে। সৌদি আরবসহ হোস্ট দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে। এতে করে কর্মীদের প্রবাস জীবন স্বস্তির হবে। সরকার বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দক্ষ হয়ে বিদেশ গমনের জন্য সচেতনতামূলক লিফলেট, বুকলেট, পোস্টার বিতরণও টিভি কমার্শিয়াল, নাটিকা প্রভৃতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। নারীর নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে পৃথকভাবে টিভি কমার্শিয়াল ও নাটিকা প্রস্তুতপূর্বক ইলেকট্রনিক মিডিয়া, মন্ত্রণালয় ও দপ্তর/সংস্থার ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজসহ তৃণমূল পর্যায়ে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রণালয় ও দপ্তর/সংস্থার তথ্যবহুল ওয়েবসাইট রয়েছে। এটি ব্যবহার করে দেশের সাধারণ মানুষ বিদেশে কর্মসংস্থান সম্পর্কিত পদ্ধতি ও যাবতীয় দিক নির্দেশনামূলক তথ্যাদির বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।
বাংলাদেশের নারী সমাজের অর্থনৈতিক মুক্তি ও টেকসই সামাজিক অবস্থান সৃষ্টি করতে নারী কর্মীদের অভিবাসন অত্যন্ত জরুরি। লক্ষণীয় যে, বিগত সময়ে নারী কর্মীদের অভিবাসন বিভিন্ন কারণে ব্যাহত হওয়ায় নারী পাচারের ঘটনা ঘটতো। অভিবাসন ও মানব পাচার একে অপরের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অভিবাসন ব্যাহত হলে মানব পাচার বেড়ে যাবেÑএটাই স্বাভাবিক। সব প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে অভিবাসী নারী শ্রমিকরা আনন্দের সঙ্গে তারা তাদের কর্মস্থলে কাজ করতে পারবে।
পিআইডি ফিচার