Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:15 am

সার নিয়ে বিপাকে ময়মনসিংহের কৃষক

রবিউল আউয়াল রবি, ময়মনসিংহ: কয়েক দফা কমিয়ে সারের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনাকে সরকার নিজেদের অন্যতম সাফল্য বলে দাবি করে থাকে। এর মাধ্যমে সরকারের ‘কৃষিবান্ধব নীতি’র প্রতিফলন ঘটায় তা প্রশংসিত হয়েছে। তবে চলতি বছর আমন মৌসুমে এসে ময়মনসিংহের সব উপজেলায় সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সার। সরকার নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি হচ্ছে, অনুমোদিত ডিলাররা এমন দাবি করলেও খুচরা বিক্রেতারা স্বীকার করেছেন বেশি দামে সার বিক্রির কথা।

একাধিক খুচরা বিক্রেতা শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, ডিলাররা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দাম রাখছেন। আর তারা বস্তা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কিংবা কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। খুচরা সার ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, চাহিদার তুলনায় ডিলাররা সার কম দেয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে। আর কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, সারের ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একজোট হয়ে কারসাজি করে সারের দাম বাড়িয়েছেন।

অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, প্রকার ভেদে বস্তায় এবার তাদের সারের জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে। এর ফলে তাদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার প্রতিটি উপজেলায় সরকার নির্ধারিত দামেই ইউরিয়া সার প্রতি কেজি ১৬, এমওপি প্রতি কেজি ১৫, ডিএপি প্রতি কেজি ১৬ ও টিএসপি প্রতি কেজি ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ডিলার ও খুচরা পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ মূল্য বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ৮০০, টিএসপি ১১০০, ডিএপি ৮০০ ও এমওপি ৭৫০ টাকা।

তবে সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের সব উপজেলায় অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে খোদ ডিলাররা। এসব এলাকার কয়েক জন খুচরা ব্যবসায়ী ও কৃষকরা শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যদিও এসব এলাকার সার ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রির দাবি করছেন।

মুক্তাগাছা উপজেলার কৃষক আবু মিয়া জানান, ইউরিয়া প্রতি বস্তা ৮৫০ থেকে ৮৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি।

অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স পপুলার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শ্রী নৃপেন্দ্র সরকার শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা সরকারের নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি করছি, এর বেশি বলতে পারব না। আপনি আমাদের সার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির সঙ্গে কথা বলেন।

অপর একজন সার ডিলার অমিত কুণ্ডু অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা অতিরিক্ত দামে কোনো সার বিক্রি করছি না। আপনি কৃষি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিতে পারেন।

বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়ে জানতে মুক্তাগাছা উপজেলা সার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মুক্তাগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির কোনো লিখিত অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তবে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

অন্যদিকে কৃষকদের কাছ থেকে টিএপি, ডিএপি, ইউরিয়াসহ বিভিন্ন সারের দাম বেশি নেয়া হলেও ডিলাররা কোনো পাকা রসিদ (ভাউচার) দিচ্ছেন না। এতে বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়ে প্রমাণসহ কারও কাছে অভিযোগও দিতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ডিলার ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি উন্নয়ন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুক্তাগাছায় লাইসেন্সধারী বিসিআইসি সারের ডিলার রয়েছে ১১টি। এছাড়া ময়মনসিংহ সদরে ১৫, গৌরীপুরে ১২, ফুলবাড়িয়ায় ১৪, ত্রিশালে ১৩, ভালুকায় ১১, গফরগাঁওয়ে ১৬, নান্দাইলে ১৩, ঈশ্বরগঞ্জে ১২, ফুলপুর-তারাকান্দায় ২২, হালুয়াঘাটে ১৩ ও ধোবাউড়ায় রয়েছে সাতটি।

জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ডিসি মোহাম্মদ এনামুল হক শেয়ার বিজকে জানান, কোনো কৃষকের কাছে সরকারের নির্ধারিত অতিরিক্ত দামে কোনো ডিলার সার বিক্রি করতে পারবে না। আমি বিষয়টি জানতাম না, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি কোন ডিলার অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করে থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।