শেয়ার বিজ ডেস্ক: সার ও ওষুধ সংকটের দরুন বিশ্বব্যাপী কৃষিকাজে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সরবরাহ ঘাটতি ও দাম বৃদ্ধির কারণে জমিতে সার ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছেন কৃষকরা। এতে উৎপাদন হ্রাসে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। খবর: রয়টার্স।
ব্রাজিলীয় ভুট্টা থেকে মালয়েশীয় ডুরিয়ান পর্যন্ত সব ফসলের সরবরাহে ঘাটতি এবং সারের ক্রমবদ্ধমান দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের ফসলের পুষ্টি হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা ও মূল্যস্ফীতি যোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
একদিকে সরবরাহ সংকট, অন্যদিকে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে চলতি বছর সারের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। আর কয়লার দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় এ বছর সার উৎপাদন কমেছে। ইউরিয়ার দাম এ বছর ২০০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ড্যাপের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
এ বিষয়ে এইচএসবিসির এশিয়া ইকোনমিকস রিসার্চের সহ-প্রধান ফ্রেডারিক নিউম্যান বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম গত এক দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, কেবল সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যে উৎপাদনের ওপর চাপ বাড়বে, বিশেষ করে আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে, যেখানে সরকারের ভর্তুকির জন্য সামান্যই সুযোগ থাকে।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ এরই মধ্যে লাখ লাখ জীবন-জীবিকা ধবংস করে দিয়েছে, খাদ্যের ক্রমবর্ধমান খরচ দরিদ্র মানুষকে কঠিনভাবে আঘাত করেছে। তিনি যোগ করেন, এ উচ্চতর সার খরচ কেবল কৃষকদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং উচ্চ খাদ্যমূল্যের মাধ্যমে ভোক্তাদেরই কাছে পৌঁছে যাবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, চলতি বছরের খাদ্যমূল্য সূচক ২০১১ সাল থেকে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আরব বসন্তের প্রভাবে ২০১১ সালে খাদ্যের দাম বেড়েছিল। তখন থেকে বিশ্বব্যাপী কৃষকরা খাদ্য উৎপাদনে চাপের মধ্যে রয়েছেন।
কিন্তু বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী বছরের শুরুতে সার সরবরাহ আরও খারাপ হতে পারে। কারণ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও উত্তর এশিয়ার দেশগুলোয় বসন্তকালীন ফসল রোপণের জন্য সারের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, যখন চীন, রাশিয়া ও মিসর নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য সার রপ্তানি বন্ধ করে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টোনএক্স গ্রুপের সারবিষয়ক পরিচালক জস লিংভিলের মতে, আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বেশিরভাগ ইউরিয়া সার বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল ও ইউরোপে সার সংকট দেখা দেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী কৃষকরা সার কিনতে হয় বিলম্ব করছেন, নাহয় খরচ বাঁচানোর জন্য সার কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
গত নভেম্বরে ভারত ও মিসরের প্রধান প্রধান কৃষি খামারির জন্য উৎপাদন বাড়াতে সরকার সারে বড় ভর্তুকি দিয়েছে। এদিকে সারের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ফসল পরিবর্তন করে কম সার প্রয়োজন এমন ফসল রোপণ করতে শুরু করেছেন।
জার্মানির কৃষি বিভাগ এরই মধ্যে সতর্ক করে বলছে, সারের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় অনেক কৃষক সারের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন।
সোয়াবিন ও ভুট্টা উৎপাদনে শীর্ষ দেশ ব্রাজিল উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, সার সংকটে আগামী বছর উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে।
অন্যদিকে উত্তর আমেরিকার কৃষকরা দাম কমার আশায় চলতি বসন্তের মৌসুমে সার কিনতে দেরি করছেন। কিন্তু লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, যারা বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য উৎপাদন করে, তাদের কাছে ২০২২ সালে সার ব্যবহার কমানো ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
পাম অয়েল উৎপাদনকারী দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় সারের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ৯৫ শতাংশ সার আমদানিকারক মালয়েশিয়ায় সার সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল উৎপাদনকারী একজন আলব্রাটর্স বলেন, তিনি সার উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করেছেন। তিনি বলেন, সারের দাম একবার বাড়লে আর কমতে দেখা যায় না। ফলে কৃষকদের বিপত্তির অন্ত থাকে না।
নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়ার পর ডিসেম্বরে কমতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, সারের দাম হ্রাসে উৎপাদক দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।