মেহেদী হাসান, রাজশাহী: অপেক্ষাকৃত উঁচু ও বেলে মাটিতে আগাম আলু চাষের জন্য নেমেছেন রাজশাহীর কৃষকরা। তবে মৌসুমের শুরুতে বাধা পড়ল সারে জেলার তানোর, গোদাগাড়ী ও বাঘা উপজেলার কৃষকরা এমওপি ও ডিএপি সার সংকটে পড়েছেন। এসব উপজেলার বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার ডিলার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে এমওপি (পটাশ) সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, আলুর মৌসুমে জমিতে সার প্রয়োগের সময় ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অধিক মুনাফার আশায় এমওপি ও ডিএপি সার মজুত করে। সারের সংকট না থাকলেও কৃত্রিম সংকট করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। গুদামে সার জমা রেখে কৃষকদের দেয়া হয় না। ফলে কৃষকদের মধ্যে সার নিয়ে হাহাকার শুরু হয়। এ সুযোগে সরকারি দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করে অধিক মুনাফা পেয়ে থাকেন ডিলাররা।
উপজেলার অসাধু এক কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজশে তারা এ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এতে এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। এখানে ওই সিন্ডিকেটের কথাই আইন। তারা সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অধিক মুনাফার আশায় নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
তানোর উপজেলায় প্রতি মৌসুমের মতো সম্প্রতি এবারও পাঁচ শতাধিক কৃষক পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের জন্য জমি চাষাবাদে নেমেছেন। কিন্তু বীজ ও জমি প্রস্তুত থাকলেও এমওপি (পটাশ) ও ডিএপি সার সংকটে আলু বীজের চারা রোপণ করতে পারছেন না। এ নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
তানোরের যোগীশহ এলাকার কৃষক রেজাউল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রতি বছর ৩০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। কোল্ড স্টোরেজে এখন আমার ১২০০ বস্তা আলু আছে। বাজারে দাম ভালোই আছে কিন্তু পাইকারিতে দাম নাই। প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা দাম পেলে ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে চাষ করব।
সারের সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারের সংকট আছে। এলাকার বড় কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছি। তারা বিষয়টির সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। এখন যদি সার না পাওয়া যায়, সংকট থাকে, তাহলে বেশি দামেই কিনতে হবে। সরকারের এদিকে নজর দেয়া দরকার।
এদিকে বাঘার কলিগ্রাম এলাকার কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, খোলাবাজারে ইউরিয়া টিএসপি সার পাওয়া গেলেও পটাশ ও ডিএপি সার মিলছে না, পাওয়া গেলেও দাম বেশি। ডিলারদের কাছে এসব সার কিনতে গেলে তারা সাপ্লাই নেই বলে ডিএপির বদলে টিএসপি সার নেয়ার জন্য কৃষকদের বাধ্য করছেন।
গোদাগাড়ির কুন্দালিয়া এলাকার কৃষক তরিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে। সারের বাজার মনিটর কমিটির কোনো দেখা নাই। কৃষকদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া শেষ হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। গত ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ভালো দামের আশায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আলু। এবারও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সারের তীব্র সংকট দেখা দেয়ার বিষয়টি নজরে আসে তানোর থেকে। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা সারডিলার সমিতির সভাপতি মোহাম্মাদ আলী বাবু জানান, সিন্ডিকেট নয়, এমওপি (পটাশ) সারের কোনো সরবরাহ নেই। কিন্তু ডিএপির বদলে টিএসপি দিয়ে কৃষকদের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তবে বেশি দামে নয়, সরকার নির্ধারিত দামে সব ধরনের সার বিক্রি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, এমওপি (পটাশ) ও ডিএপি সার চাহিদামতো সরবরাহ নেই। এজন্য সাময়িক সার সংকট হয়েছে। আমরা দুয়েক দিনের মধ্যে চাহিদামতো বরাদ্দ পেয়ে যাব।
এ ব্যাপারে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ইউএনও পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা কেজেএম আব্দুল আউয়াল জানান, সংকট দেখিয়ে কৃষকের কাছে সারের বেশি দাম নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে ডিলারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।