কেএম রুবেল, ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বাউষখালী এলাকায় সিংহ পরিবারের ঐতিহ্যবাহী বাবুবাড়ি রক্ষা ও সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সালথা উপজেলা পরিষদের সামনে সালথা-ফরিদপুর সড়কে দুই ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ফরিদপুরের ২১টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষরযুক্ত একটি স্মারকলিপি দেন সংগঠনগুলোর নেতারা।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে সালথা উপজেলা শান্তির আহ্বান, ফরিদপুর সিটি পেজ/লাইভ গ্রুপ, ঘুরিফিরি ফরিদপুর গ্রুপ, কানামাছি ভোঁভোঁ, সদরপুর সেপটোস ফোর, ফরিদপুর সাইক্লিস্টস কমিউনিটি, ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ফরিদপুর এক্সপ্রেস, ফরিদপুর পরিবার ও সালথা কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। এছাড়া সালথা পাবলিক ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েশন, সালথা প্রেস ক্লাব, প্রভাতের হাসি ফাউন্ডেশন বল্লভদী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, উপজেলা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, আমরা করব জয় ফরিদপুর, সালথা ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা আন্দোলন, উই কেয়ার ফরিদপুর, সালথা রেড ক্রিসেন্ট এবং বিশ্বাস পরিবার সংগঠনের পৃথক ব্যানারে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বল্লভদী ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম। এছাড়া মানববন্ধনে অংশ নেয়া সংগঠনগুলোর পক্ষে বক্তব্য দেন মো. হুমায়ন কবির, মো. এমদাদুল হাসান, শেখ আকতার হোসেন, শরিফ খান, এলিজা, কাজী এরশাদ, এইচ এম আব্দুর রহমান, নির্মল বিশ্বাস, বায়েজিদ, আইনুজ্জামান
আকাশ, ইকবাল মাহমুদ ইমন, মো. শফিকুল ইসলাম, সঞ্জয় সাহা প্রমুখ।
সংস্কার ও সংরক্ষণ করে বাউষখালীর বাবুবাড়িটিকে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন, ইতিহাস ও গবেষণার কেন্দ্র এবং সরকারি সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিংহ পরিবারের বাবুবাড়ি শুধু সালথা উপজেলা নয়, সারাদেশের ঐতিহ্য। এ বাড়ির অনেক পুরনো ভবন ভাঙার চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতকারীরা। কী কারণে বা কোন উদ্দেশ্যে বাড়ির ভবন ভেঙে জায়গা খালি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তা আমরা জানি না। আমরা খবর পেয়ে বাবুবাড়ির ঐতিহ্য রক্ষায় মাঠে নেমেছি। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেব। তবু বাড়িটি রক্ষায় আমরা কাজ করে যাব। বাড়িটি সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চোধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা।
সালথা উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হাসিব সরকার বলেন, সত্যজিৎ সিংহের বাড়িটি রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা এরই মধ্যে বাড়িটি পরিদর্শন করেছি। নতুন করে বাড়িটি নিয়ে আর কেউ যাতে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি।
জানা গেছে, দুই শতাব্দীর বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকা সিংহ পরিবারের বসবাসের এ বাড়িতে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। সিংহ পরিবারের গোড়াপত্তন সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও এই পরিবার শুরু থেকেই অত্র অঞ্চলে বিভিন্ন জনহিতকর কাজকর্মে লিপ্ত ছিল। সিংহ পরিবারের ঐতিহ্যের শেষ চিহ্ন হিসেবে পুরনো কারুকার্যখচিত দুটি ভবন ও একটি মন্দির এখনও পর্যটনপ্রেমীদের টানে।
সিংহ পরিবারের কোনো সদস্য ওই বাড়িতে থাকেন না, সবাই মারা গেছেন। বাড়িটি খালি হওয়ার পর থেকে একটি মহল দখল করার জন্য পাঁয়তারা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাড়ির পুরনো ভবন রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে দুষ্কৃতকারীরা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এই প্রথম ওই বাড়িটি রক্ষা ও সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন করল ২১টি সংগঠন।
