সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: সামুদ্রিক মৎস্যের মজুত নিরূপণের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় হাতে নিয়েছে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প। এক হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ জরিপের মাধ্যমে জানা যাবে সমুদ্রের তলদেশীয় ও ভাসমান প্রজাতির মাছের তথ্য। জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ হলেও এখনও চোখে পড়ার মতো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।
তবে প্রকল্প পরিচালক অধীর চন্দ্র দাস বলছেন, ‘প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান না হলেও প্রাথমিক অনেক কাজ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এছাড়া ১৬টি মেরিন ফিশারিজ সার্ভিল্যান্স চেকপোস্টের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শুরু হলে প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হবে।’
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সামুদ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চলে মৎস্য জরিপের মাধ্যমে চিংড়ি এবং তলদেশীয় ও ভাসমান প্রজাতির মৎস্যের মজুত নিরূপণ কর্মসূচি জোরদারকরণ; সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা সংস্থার সামর্থ্য বৃদ্ধিপূর্বক বিজ্ঞানভিত্তিক টেকসই মৎস্য মজুত সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন; বাণিজ্যিক ও ক্ষুদ্রায়তন মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন অধিকতর কার্যকর পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি (এমসিএস) পদ্ধতির বাস্তবায়ন; উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য আহরণ ও উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট অবকাঠমো উন্নয়ন এবং উৎপাদিত মৎস্যের ভ্যালু চেইন উৎকর্ষসাধন ও অপচয় হ্রাস করা; উপকূলীয় জেলাগুলোয় ক্লাস্টার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি বৃদ্ধি করা; মৎস্য মজুত পুনরুদ্ধার এবং উপকূলীয় মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র মৎস্যজীবী কর্তৃক টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা ও বিকল্প জীবিকায়নে সহায়তা করা এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণ ব্যবস্থাপনায় ‘জাতীয় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হবে। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পটি চারটি ধাপে শেষ করা হবে। প্রথম ধাপে থাকবেÑমৎস্য খাতে টেকসই বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষমতা বৃদ্ধি (মৎস্য অধিদপ্তর পার্ট)। পরের ধাপে থাকবে আবকাঠামোগত উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন (মৎস্য অধিদপ্তর পার্ট)। তৃতীয় ধাপে থাকবে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে বিকল্প পেশায় রূপান্তর (এসডিএফ পার্ট)। সর্বশেষ ধাপে থাকবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনা।
এর মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্যে রয়েছেÑ১৬টি মেরিন ফিশারিজ সার্ভিল্যান্স টেজপোস্ট নির্মাণ, একই সঙ্গে ১৬টি পন্টুন স্থাপন, ১৮টি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার/ফিশ হারবার নির্মাণ, ফিশমার্কেট পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন, হার্ভেস্ট লস কমানো, তিনটি ফিশ কোয়ারেন্টাইন ল্যাব প্রতিষ্ঠাকরণ, তিনটি ফিশ ডায়াগনস্টিক ল্যাব প্রতিষ্ঠাকরণ, তিনটি পিসিআর ল্যাব নবায়ন/আধুনিকায়ন, একটি কোয়ারেন্টাইন রেফারেন্স ল্যাব প্রতিষ্ঠাকরণ, একটি ব্রুড (মা-চিংড়ি) ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন ও ১২৯টি উপকূলীয় খাল পুনর্বাসন ও খনন।
একই সঙ্গে রয়েছে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন ও জীবিকার বিকল্প পেশা রূপান্তরের জন্য উপকূলীয় ৪৫০টি মৎস্য গ্রামে কমিউনিটি সেভিংস গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা, ১০০ মডেল জেলে গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা এবং এর মধ্যে ৬০ শতাংশ সুবিধাভোগীকে অর্থ সহায়তা প্রদান, ১০০ মডেল জেলে গ্রামে ফিশারিজ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা, মডেল গ্রামের ১৮ হাজার তরুণ-তরুণীকে কারিগরি ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, ১০০ প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি ও নিবন্ধন করা, ৯০টি ইউথ ফেস্টিভাল প্রোগ্রাম ও ছয়টি জব ফেয়ার আয়োজন করা এবং ৪৫টি উপজেলা জেলে ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া মৎস্য খাতে টেকসই বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষমতা বৃদ্ধি জন্য ২২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করার কথা রয়েছে।
কিন্তু প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাজ চোখে পড়েনি। এর ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া জরিপ কার্যক্রমও শুরু করা যাবে না। কারণ এই প্রকল্পের মধ্যে জরিপ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্প হওয়ায় মেয়াদকালে শেষ করতে না পারলে নানা ধরনের জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক মো. লতিফুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্ট সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে এক হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ সহায়তা দেবে এক হাজার ৫৮৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বাকি ৩০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা জিওবির মাধ্যমে পাওয়া যাবে। প্রকল্পটির আওতায় ১৬টি উপকূলীয় জেলার ৭৫টি উপজেলায় কার্যক্রম চলবে। আর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যাবে।