নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার ভুয়া রিপোর্ট তৈরি ও অনুমোদনহীন কিট দিয়ে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অভিযোগে করা মামলায় সাহাবুদ্দিন মেডিকেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান থানায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহাবউদ্দিনের ছেলে ফয়সাল আল ইসলাম, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবুল হাসনাত এবং কর্মকর্তা সাহরিজ কবিরের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব।
এর আগে বিকালে সাহাবউদ্দিন বলেছিলেন, তার ছেলে ফয়সল ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত’। তাকে একটি হোটেলে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। বনানীর ‘সুইট ড্রীম’ হোটেল থেকে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওই হোটেলটির মালিক সাহাবউদ্দিন।
র্যাবের নায়েব সুবেদার ফজলুল বারীর করা মামলার বাকি দুই আসামি সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হাসনাত ও স্টোর কিপার শাহরিজ কবিরকে রোববার অভিযানের সময়ই গ্রেপ্তার করা হয়।
গুলশান থানায় করা এই মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ দণ্ডবিধির নানা ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।র্যাবের র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ এর আগে বলেছিলেন, হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ৯ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় সরকার কর্তৃক র্যাপিড টেস্টের অনুমোদন না থাকলেও তারা সেটা করেছে। পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছে। করোনাভাইরাস নেগেটিভ রোগীকে পজিটিভ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ভিন্ন ল্যাব থেকে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের প্যাডে প্রতিবেদন দিয়েছে।
হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর আগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তা নবায়ন করা হয়নি বলেও র্যাবের অভিযোগ। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিনের ছেলে ফয়সলের নির্দেশে ডা. আবুল হাসনাত অন্যদের সহযোগিতায় এসব অপরাধের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে।
এজাহারে বলা হয়, নানা সূত্রে অভিযোগ পেয়ে রোববার অভিযান চালানোর সময় তিন তলায় ডা. আবুল হাসনাতের কক্ষে গিয়ে র্যাপিড টেস্ট কিট আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। পরে তার কক্ষে তল্লাশি করে ‘হাইটপ ওয়ান স্টেপ র্যাপিড টেস্ট’ লেখাযুক্ত বক্স পাওয়া যায়, যার ভেতর ৯টি র্যাপিড টেস্ট কিট ছিল। এছাড়া আবুল হাসনাতের স্বাক্ষর করা অ্যান্টিবডি টেস্টের চারজনের প্রতিবেদনও পাওয়া যায়।
অনুমোদনহীন র্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছাড়াও করোনাভাইরাস নেগেটিভ রোগীদের পজিটিভ বানিয়ে ভর্তি রাখা, আইসিইউতে রেখে প্রচুর পরিমাণ বিল করার অভিযোগও করা হয় এজাহারে।
মামলায় এনামুল হক নামে এক রোগীর ছেলের অভিযোগ দিয়ে বলা হয়, অভিযানের খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে এসে জানান যে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য তার কাছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা নিলেও কোনো প্রতিবেদন না দিয়ে মৌখিকভাবে ‘নেগেটিভ’ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য এক রোগীর কোভিড-১৯ পরীক্ষা ঢাকার বাইরে একটি হাসপাতাল থেকে করিয়ে পজিটিভ দেখিয়ে ভর্তি করানো হয়। পরে ওই রোগীর স্বজনের সন্দেহ হলে ঢাকার একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করালে ফল নেগেটিভ আসে।
মামলায় বলা হয়, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় অস্ত্রোপাচার কক্ষে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সামগ্রী পাওয়া যায়। এরমধ্যে ২০১৩ সালে মেয়াদ শেষ হয়েছে, এমনও মেডিকেল সামগ্রীও জব্দ করা হয়েছে। প্রধান আসামি ফয়সল আল ইসলামের নির্দেশে অধিক টাকা আদায়ের মতলবে এ সব মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল সামগ্রী সংরক্ষণ করা হয় বলে র্যাবের দাবি।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. হাসনাতকে চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিনের ছেলে ফয়সলের ‘দুষ্কর্মের সহযোগী’ উল্লেখ করা হয় মামলায়। তারা পরস্পর যোগসাজসে চিকিৎসার নামে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতির নামে প্রতিবেদন প্রদান, চোরাচালানের মাধ্যমে চীন থেকে র্যাপিড কিট আনাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করেছে।