Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:58 pm

সাহারা ট্রেডিংকে কোটি টাকা জরিমানা

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: রাজধানীর মিটফোর্ড-বংশাল এলাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাহারা ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট আনকোটেড ঘোষণায় এক লাখ ১৫ হাজার কেজি ডেক্সট্রোজ বা গ্লুকোজ আমদানি করেছে। যদিও চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ওই চালানে এক লাখ ২০ হাজার কেজি ঘোষিত পণ্য থাকার কথা ছিল, কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই চালানে মাত্র পাঁচ হাজার কেজি ঘোষিত পণ্য রয়েছে। ফলে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকির দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। একই সঙ্গে নতুন এইচএস কোড অনুসারে আরও ৪২ লাখ ২৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত শুল্ককর আরোপ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাহারা ট্রেডিং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চীন থেকে এক লাখ ২০ হাজার কেজি ক্যালসিয়াম কর্বোনেট আনকোটেড পণ্য আমদানির ঘোষণা দেয়। এর আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছে ১২ হাজার মার্কিন ডলার। সে মোতাবেক সাহারে নামক জাহাজে করে চীন থেকে পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরেও আসে। তারপর আমদানিকারক পণ্য খালাসের জন্য চলতি বছর ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি (বি/ই) দাখিল করে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কাছে গোপন সংবাদ থাকায় চালানটি অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল£সিস্টেমসে বি/ই লক করে অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। তারপর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে দেখা যায়, আমদানিকারক ক্যালসিয়াম কর্বোনেট ঘোষণায় ডেক্সট্রোজ বা গ্লুকোজ নিয়ে আসছে।

এ বিষয়ে কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার কর্মকর্তারা জানান, ‘মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত চালানটি সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধির সহযোগিতায় এআইআর কর্মকর্তারা এপ্রিলের ১২ তারিখে শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর নমুনা উত্তোলন করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠান। তারপর একই মাসের ১৫ তারিখে ল্যাবরেটরি থেকে পাওয়া রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করেছে। অর্থাৎ ওই চালানে ঘোষিত পণ্য রয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার কেজি। বাকি এক লাখ ১৫ হাজার কেজি পণ্যই ঘোষণা-বহির্ভূতভাবে আমদানি হয়েছে।’

কর্মকর্তারা আরও জানান, রিপোর্টে বলা হয়েছেÑক্যালসিয়াম কর্বোনেট আনকোটেড প্লাস্টিক, রাবার, পেইন্ট, কাগজ, ডিটারজেন্ট ও ফার্মাসিউটিক্যাল প্রভৃতি শিল্পে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ডেক্সট্রোজ বা গ্লুকোজ মিষ্টান্ন, শিশুখাদ্য, ওষুধ প্রভৃতি শিল্পে ব্যবহার করা হয়। একই সঙ্গে এটি চোলাই, ওয়াইন তৈরি, ক্যারামেল রং, বেকিং, ক্যানিং, গাঁজন প্রভৃতি উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি এটি টেক্সটাইল শিল্পে হ্রাসকারী এজেন্ট হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি আমদানি নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু ঘোষিত এইচএস কোড পরিবর্তন করা হবে। তাতে শুল্ককরের পরিমাণ বাড়বে। তাই সঠিক এইচএস কোড ও যথাযথ শুল্কায়নযোগ্য মূল্যে শুল্কায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সেকশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

তারপর সংশ্লিষ্ট সেকশন-২-এর কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, চালানটি আমদানির বিপরীতে ‘কাস্টমস আইন ১৯৬৯’-এর সেকশন-৩২-এর আওতায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যা একই আইনের সেকশন ১৫৬(১)-এর টেবিলের ক্লস-১৪ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অর্থাৎ চালানটি আমদানির বিপরীতে আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ৪২ লাখ ২৬ হাজার ৪৩৩ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছে। তাই মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করায় প্রতিষ্ঠানটিকে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অর্থাৎ অন্যান্য শুল্ককরসহ চালানটি খালাস করতে আমদানিকারককে এক কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ৪৩৩ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

চালানটি আমদানির জন্য এসসি করা হয়েছিল শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড থেকে এবং পণ্যগুলো খালাসের জন্য আমদানিকারকের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান মামনুর এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র উপ-কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) সালাউদ্দিন রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চালানটি আমদানির বিপরীতে আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় আশ্রয় নিয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎপরতায় রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক এইচএস কোড নির্ণয় করে বাস্তব শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাও করা হয়েছে।’