Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 6:57 pm

সাড়ে চার বছরে অগ্রগতিমাত্র ৩৫ শতাংশ


নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: দীর্ঘদিন ধরে পন্টুন ব্যবহার করে নৌবহর বার্থিং করার কাজটি করে আসছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। নৌবহর বার্থিংয়ের কাজটি বৃহৎ পরিসরে নিরাপদ ও সুন্দরভাবে করার জন্য প্রায় সাড়ে চার বছর আগে একটি ‘সার্ভিস জেটি’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চবক। তবে ঠিকাদার নিয়োগে দেরি হওয়ায় প্রকল্পটির কাজও এগিয়েছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। ফলে সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ আছে আর মাত্র এক বছর। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চবকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলোকে নোঙর করতে সহযোগিতা করে বন্দরের নিজস্ব জলযান কাণ্ডারী, টাগবোট, স্পিডবোট, বার্জ, ড্রেজার ও পাইলট বোট। আর এসব জলযান বার্থিংয়ের জন্য ‘সার্ভিস জেটি’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম মহানগরের বারিক বিল্ডিং এলাকায় কর্ণফুলীর পাড়ে চবকের জেটি সংরক্ষিত এলাকার অভ্যন্তরে জিসিবি জেটি (এক নম্বর জেটি) সংলগ্ন উজানে নির্মিত হচ্ছে এ ‘সার্ভিস জেটি’।
‘ডক অফিসের কাছে অবস্থিত সার্ভিস জেটি এক নম্বর জেটির উজানে স্থানান্তরপূর্বক পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের পরমর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ বছর মেয়াদের প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ৩৪ লাখ ২০ লাখ টাকা।
এ প্রকল্পের অধীনে ২৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২২০ মিটার দীর্ঘ ও ২০ মিটার প্রশস্ত সার্ভিস জেটি নির্মাণ ছাড়াও রয়েছে ১৭ কোটি ৭৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি উন্নয়ন; এক কোটি ২১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৭ দশমিক ৬২ মিটার দীর্ঘ ও আট মিটার প্রস্থের সংযোগ ব্রিজ; ৯ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩০ রানিং মিটার আর্থ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ; দুই কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩১ দশমিক ২৫ বর্গমিটারের তিনতলাবিশিষ্ট একটি অফিস ভবন নির্মাণ; তিন কোটি তিন লাখ দুই হাজার টাকা ব্যয়ে এক হাজার বর্গমিটারের একটি গুদামঘর বা ওয়্যার হাউস নির্মাণ; দুই কোটি পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন; দুই কোটি ৫০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই হাজার ১০০ কিউবিক মিটারের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পানির রিজার্ভার; ছয় কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কিউবিক মিটার প্রাক-ড্রেজিং ওয়ার্ক; পানি সরবরাহ ও ফায়ার ফাইটিংয়ে ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয় এবং জেটি সংরক্ষণ ও ল্যান্ডিং সিঁড়িতে ব্যয় চার কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ১১ জুলাই এই প্রকল্পে পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়। একই বছরের ১ জুন কারিগরি ও ৬ ডিসেম্বর আর্থিক প্রস্তাবনার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিডিউল দাখিল করে এবং এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রাক-যোগ্য বিবেচিত হয়। ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনটি প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রস্তাবনা দাখিল করে। প্রায় দেড় বছর পর সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স প্রতনু-ওহাব-এ বারিক (জেভি) কর্তৃক দাখিল করা ৭৩ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৬ টাকার দরপ্রস্তাব ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর অনুমোদন করেন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী। ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর মেসার্স প্রতনু-ওহাব-এ বারিকের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান এবং ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি চুক্তি করে চবক। ওইদিন থেকেই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে ভূমি উন্নয়ন, রিটেইনিং ওয়াল/শোর প্রটেকশন, শেড, অফিস ভবন ও ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংক নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে আছে। সংযোগ ব্রিজের স্থায়ী স্টিল কেসিং, জেটি নির্মাণ কাজের সমস্ত পিএইচসি পাইল ও রাবার ফেন্ডার বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। গ্যাংওয়ে ও জেটি নির্মাণ কাজের আওতায় পিএইচসি পাইল ড্রাইভিং কাজ চলছে।
প্রকল্পের ধীর গতি সম্পর্ক দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চবকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান সরকার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন অনুযায়ী সময় দেখানো হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দিতে হয়েছে, চুক্তি করতে হয়েছে। তারপর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের কাজ কিন্তু অনেক পরে শুরু হয়েছে। কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল, তবে তা ওভারকাম হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১৯ কোটি দুই লাখ টাকা এবং ৩৫ শতাংশ বাস্তব (ভৌত) অগ্রগতি হয়েছে।’