Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:13 pm

সায়হাম গ্রুপ

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বনেদী গ্রুপ সায়হাম। গ্রুপটির স্বত্বাধিকারী সায়হাম পরিবার। পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ওই পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক শিল্প-কারখানা নির্মাণ করে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দূর হবে এলাকার দারিদ্র্য এমনই মনে করে এই পরিবার। ব্যবসায় নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সততার কারণে দেশজুড়ে তাদের সুনাম রয়েছে। বস্ত্র, তথ্যপ্রযুক্তি ও নির্মাণ খাতে গ্রুপটি ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।

গ্রুপটির কারখানাগুলো রয়েছে সায়হাম নগরে। হবিগঞ্জের নয়াপাড়ায় এই সায়হাম নগর অবস্থিত। প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ এই এলাকাটি। এর অবস্থান হবিগঞ্জের নোয়াপাড়ায়।

সায়হাম গ্রুপের পথচলা শুরু হয় স্বপ্নদ্রষ্টা সৈয়দ সাঈদউদ্দিন আহমেদের হাত ধরে, ১৯৫২ সালে। তখন তিনটি প্রতিষ্ঠানের

মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এগুলো হলো- সফ্কো রাইস মিলস, সাইদউদ্দিন টিম্বার ইন্ডাস্ট্রি ও স্ট্যান্ডার্ড প্রিন্টিং প্রেস। ১৯৮২ সালে তার ছেলেরা সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে একটি আধুনিক কম্পোজিট টেক্সটাইল কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। শুরু থেকেই এই কারখানায় উন্নতমানের কাপড় তৈরি করা হয়। এখানকার উৎপাদিত কাপড়ের একটি বড় অংশ রফতানিও করা হয়। পরের বছরগুলোয় এ তালিকায় যুক্ত হয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে সায়হাম নগর।

বর্তমানে সায়হাম গ্রুপে প্রায় ৮ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছেন। দেশ ও দেশের বাইরে ব্যবসা পরিচালনায় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান রয়েছে। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এসএকেএম সেলিম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সৈয়দ এবিএম হুমায়ুন। প্রায় ৩৪ বছর ধরে টেক্সটাইল ও স্পিনিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন। পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাদেক আহমেদ। পরিচালনা পর্ষদে আরও রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার কাশফিয়া নাহরিন, প্রফেসর ড. নাইমা মুয়াজ্জেম, মোমেনা বেগম, সৈয়দ সাবাব আহমেদ ও মোহাম্মদ মোফাচ্ছেল আলী। শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সুসম্পর্ক বিরাজমান। কর্মীদের সব ধরনের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তাদের কল্যাণ সাধনে কর্তৃপক্ষ বেশ আন্তরিক। তাদের সুস্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা হয়। ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য প্রতি বছর বেতনভাতা বাড়ানো হয় এই গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানে। এমনকি কর্মীদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা করে থাকে সায়হাম গ্রুপ।

স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই গ্রুপ প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান ও ছাত্রবৃত্তিসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে সহযোগিতা করে আসছে। এছাড়া খেলাধুলা, বিভিন্ন সামাজিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে গ্রুপটি সহায়তা করে থাকে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে গুণগতমানে সেরা পণ্য সরবরাহ করা গ্রুপটির ব্যবসায়িক নীতি। পণ্য উৎপাদনের বেলায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও উদ্ভাবনী কৌশল অবলম্বন করা হয়। উৎপাদন ও পণ্যের গুণগতমান বাড়ানোর লক্ষ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পুরনো যন্ত্রপাতি কিংবা মেশিনের সংস্কার, পরিবর্তন ও প্রতিস্থাপন করা হয়। ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে পণ্যের দাম রাখা হয়। আরও আছে সেবার মানোন্নয়ন। গ্রুপের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠান একই নীতি অনুসরণ করে থাকে। তাই গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক

রয়েছে তাদের। বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ব্যবসায়িক অংশীদার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে।

 

অঙ্গপ্রতিষ্ঠান

সায়হাম মাল্টিফাইবার টেক্সটাইলস লিমিটেড (স্পিনিং ইউনিট)

৩০ হাজার স্পিন্ডেলস উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালে। সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, চীন ও ইতালি থেকে আমদানি করা হয়েছে এর যন্ত্রপাতি। কার্ডেড মানের সুতা উৎপাদন করা হয় এখানে।

সায়হাম মাল্টি ফাইবার টেক্সটাইলস লিমিটেড (ননওভেন ইউনিট)

প্রস্তাবিত এই প্রতিষ্ঠানটি শিগগিরই পথচলা শুরু করবে। এখানে দৈনিক ১০ মেট্রিক টন ননওভেন টেক্সটাইলস উৎপাদন করা হবে।

 

সায়হাম জুট মিলস

প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। দিনে ২০ মেট্রিক টন পাটের সুতা উৎপাদন করে সায়হাম জুট মিলস। শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান এটি। মিসর, আলজেরিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, ইরান, মিয়ানমার ও তুরস্কে রফতানি হয় তাদের পণ্য।

এছাড়া সায়হাম টেকনোলজিস নামে আরও একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা ব্যবসার অপরিহার্য উপাদান। এসব সমস্যা মোকাবিলা করে সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছে সায়হাম গ্রুপ।