বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র বীকন পয়েন্ট। এক সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠানটির নানা দিক নিয়ে কথা বলেন বীকন পয়েন্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হানিফ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আয়শা আক্তার চৌধুরী
বীকন পয়েন্ট সম্পর্কে জানতে চাই…
মো. হানিফ: ‘বীকন পয়েন্ট’ বীকন গ্রুপ অব কোম্পানির একটি করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) প্রকল্প। অর্থাৎ কেবল সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কোম্পানির চেয়ারম্যান এ প্রকল্পটি হাতে নেন। বাংলাদেশে মানসিক রোগী ও মাদকাসক্তরা যেন দেশে বসে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা পান, সে লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে বীকন পয়েন্টের পথচলা শুরু।
মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণ কি বলে মনে করেন?
মো. হানিফ: প্রতিযোগিতাপূর্ণ জীবনযাপন এর অন্যতম একটি কারণ। এছাড়া মানসিক চাপ, বাবা-মায়ের অঢেল প্রশ্রয়, হতাশা, মাদকাসক্তি প্রভৃতি বিষয় বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব কারণে দিন দিন মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
বীকন পয়েন্টের টিম ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে বলুন…
মো. হানিফ: নেদারল্যান্ডসের সেফ হ্যাভেন ক্লিনিকের রন ও ইংল্যান্ডের কাউন্সেলিং কাউন্সিলের প্রধান বারবারা পসোনের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে বীকন পয়েন্ট তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এরপর এখানে যোগ দেন অভিজ্ঞ ডাক্তার, মনোচিকিৎসাবিদ, ফিজিশিয়ান, নার্স, শেফ, ওয়ার্ডবয়সহ আরও অনেকে।
মানসিক সমস্যা সোশিও সাইকোলজি, নাকি বায়োলজিক্যাল?
মো. হানিফ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মানসিক সমস্যা নানা ধরনের সামাজিক কারণে হয়ে থাকে। যেমন পারিবারিক সমস্যা, হতাশা, ব্যক্তিগত মানসিক অবসাদ প্রভৃতি থেকে মানসিক সমস্যার সূত্রপাত। তবে বর্তমানে আরও একটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তা হলো শিশু-কিশোর কিংবা তরুণদের মধ্যে মানসিক জটিলতা। এ মানসিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ সন্তানকে তার মা-বাবার ঠিকমতো সময় না দেওয়া, যথাযথভাবে যতœ না করা। আবার অনেক বাবা-মা যতœ নিলেও তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয়। এছাড়া ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা তাদের সন্তানকে প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দেন, যা তাদের মানসিক নানা সমস্যায় আচ্ছন্ন করে ফেলে। একদিকে এসব সমস্যা যেমন ছেলেমেয়েদের মানসিক সমস্যার মধ্যে ডুবিয়ে রাখছে, তেমনি এ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে এর সমাধান না করে বরং অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তারা মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। আর বায়োলজিক্যাল কিছু সমস্যাও রয়েছে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
বীকন পয়েন্ট মাদকাসক্তদের কোন ধরনের সেবা দেয়?
মো. হানিফ: বীকন পয়েন্টে মাদকাসক্তদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাদের উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। মাদকাসক্তদের জন্য এখানে চিকিৎসাটা একটু ভিন্ন ধরনের। এখানে দীর্ঘ মেয়াদে রাখা হয় তাদের। মেডিক্যাল চিকিৎসা ছাড়াও নানা সেশনে ভাগ করে যতœ নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সকালে শারীরিক অনুশীলন, দুপুরে নিয়মিত ডাক্তারের চেক-আপ, বিকালে গ্রুপ সেশন বা যোগব্যায়াম প্রভৃতি। এখান থেকে যারা ভালো হয়ে ফিরে যান, তাদের নিয়ে এসব রোগীর জন্য একটি ‘সেলফ হেল্প গ্রুপ’ করা হয়েছে। তারা মাঝেমধ্যে এখানে ঘুরতে আসেন, গল্প করেন, নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। এর মাধ্যমে যারা এখানে বর্তমানে সেবা নিচ্ছেন, তারা একঘেয়েমি বোধ করেন না এবং পুনরায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
এখানে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের সফলতার হার কেমন?
মো. হানিফ: সফলতার হার যথেষ্ট ভালো। অনেকে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তবে মাদকাসক্ত রোগীর ক্ষেত্রে সফলতা কতদিন ঠিক থাকবে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। তাই বীকন পয়েন্টের নীতি হলো, এখানে যে একবার আসে, আজীবন সে ধারাবাহিকভাবে সেবা নিতে পারবে। আর বীকন পয়েন্ট থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার পরও তাদের নিয়মিত ফলো-আপ করা হয়। এজন্য কোনো চার্জ রাখা হয় না। এমনকি রোগীর বাড়িতে গিয়েও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। প্রথম থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতজন চিকিৎসা নিয়ে গেছেন, তাদের সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে বীকন পয়েন্ট। এটিই প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় সাফল্য।
বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
মো. হানিফ: বাংলাদেশে যে মানসিক স্বাস্থ্যনীতি রয়েছে, তা আরও জোরদার করতে সরকার নতুন কিছু সংযোজনের ব্যবস্থা করছে। তাই ভবিষ্যতে এ জায়গাটি আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করছি।#