মো. ইমরান হোসেন : ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ কথাগুলো আবু হেনা রনির বেলায় প্রযোজ্য। জয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে আছেন তিনি, হাজারো মানুষের মন জয়ের আশায়।
কলকাতার জনপ্রিয় কমেডি শো মীরাক্কেল চ্যাম্পিয়ন আবু হেনা রনির কথা বলছি। তার শৈশবটা শুরু হয় নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিলদহর গ্রামে। মা বিনা বেগম গৃহিণী। বাবা
আবদুল লতিফ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। চার ভাইয়ের মধ্যে রনির অবস্থান দ্বিতীয়।
বিলদহরের একান্নবিঘা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শুরু। বিলদহর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও রাজশাহীর বরেন্দ্র সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক শেষ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
ছেলেবেলায় রনির চিন্তাভাবনা ছিল একটু আলাদা। অন্যরা যখন মঞ্চে কাউকে পারফর্ম করতে দেখতেন তখন তা উপভোগ করতো, হাততালি দিতেন। রনি তাদের পারফরম্যান্স উপভোগ করতেন। তিনিও মঞ্চে পারফরম্যান্সের স্বপ্ন দেখতেন।
সেই স্বপ্ন পূরণে কমেডির জগতে পা রাখেন রনি। এটাই তার কাছে চাঁদতুল্য। বন্ধুদের স্কুলজীবন থেকেই মজার মজার কথা বলে হাসাতেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কমেডিতে পা রাখেন ২০১০ সালে, এনটিভিতে প্রচারিত কমেডি রিয়েলিটি শো, হাশো, সিজন-১ এর মাধ্যমে। প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান দখল করেন। এরপর কমেডির প্রতি আগ্রহটা বেড়ে যায় তার।
বন্ধুমহলে কৌতুক বলে হাসানোর জন্য সবার কাছে আলাদা কদর ছিল রনির। তবে দেশের বাইরে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন, তা কখনও ভাবেননি। বন্ধুদের পীড়াপীড়িতে মীরাক্কেলে অডিশন দেন। ২০১১ সালে বগুড়া থেকে মীরাক্কেলে অডিশন দিয়ে কলকাতায় যাওয়ার সুযোগ পান। এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস।
মীরাক্কেলের যাত্রাটা তার জন্য খুব একটা সহজ ছিল না। একে তো ভিসা জটিলতায় দেরিতে গিয়েছিলেন ভারতে। তারপর আবার দেশ ও দেশের বাইরে ছিল তার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে নার্ভাস শব্দটা দূরে সরিয়ে রাখেন। সেখানকার প্রস্তুতি সম্পর্কে রনি বলেন, ‘শিক্ষা পদ্ধতিটাই এমন যে, সব পারফরমারকে দৈনিক ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকতে হয়, সারাক্ষণ নতুন জোকস নিয়ে ভাবতে হয়। গ্রুমারদের সঙ্গে আলোচনা করে অনুমোদন নিতে হয়। এরপর পারফরম্যান্সের জন্য রিহার্সেল।’ লালিত স্বপ্নজয়ের তাগিদে একে একে জয় করতে থাকেন প্রতিযোগিতার সবগুলো স্তর। হয়ে যান মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্স-৬ এর চ্যাম্পিয়ন।
মীর আফসার আলী, শ্রীলেখা মিত্র, রজতভ দত্ত ও পরান বন্দ্যোপাধ্যয়ের মন জয় করেছেন। কোটি বাঙালির হƒদয় ছুঁয়ে দিয়েছেন। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন এ তরুণ।
বর্তমানে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্টেজ শো ও স্ট্যান্ড আপ কমেডি নিয়ে ব্যস্ত আছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে উপস্থাপনা করছেন। এর মধ্যে এটিএন বাংলায় সিনে মিউজিক, বাংলাভিশনে ক্ষুদে রসিকরাজ ও বৈশাখী টিভিতে জাদুর শহর ও নেট ফান উল্লেখযোগ্য।
নতুন কৌতুক অভিনেতা তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশে স্ট্যান্ড আপ কমেডিকে আরও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে ‘বুনো পায়রা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশ কমেডি ক্লাবের উদ্যোগে দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি কমেডি ক্লাব তৈরি করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা থানা পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও কমেডি ক্লাব রয়েছে। এসব কমেডি ক্লাবের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ক্লাবের সদস্যরাই পালন করে থাকেন। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে সব ক্লাবই বুনো পায়রা ও বাংলাদেশ কমেডি ক্লাবের কাছে দায়বদ্ধ।
স্ট্যান্ড আপ কমেডির পাশাপাশি ভালো একজন অভিনেতা ও উপস্থাপক হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এ তরুণ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের স্ট্যান্ড আপ কমেডিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন।
স্বপ্ন দেখেন দেশের সব বিভাগ, জেলা ও থানায় নির্বিঘ্ন কমেডি চর্চা হবে। সব ঘরে একজন স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান তৈরি হবে। পরিবারের সবাইকে হাসি ও আনন্দে ভরিয়ে রাখবে সেই কমেডিয়ান।
Add Comment