Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:22 pm

সিংহভাগ ক্ষেত্রে বাজার যৌক্তিক আচরণ করে না

বিনিয়োগকারী সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশুর বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলায়। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে বিএসএস (অনার্স) ও এমএসএস সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর এমপিএ। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে পেশা পরিবর্তন করে ব্যাংকে যোগ দেন। বর্তমানে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। পুঁজিবাজার সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা তার। এ ধারণা থেকে বাজার সম্পর্কে জানালেন শেয়ার বিজকে। সাক্ষাৎকার রাহাতুল ইসলাম

শেয়ার বিজ: পুঁজিবাজারে কীভাবে যুক্ত হলেন? শুরুর গল্পটি বলুন

সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু: টেলিকম খাতের গ্রামীণফোন যখন বাজারে তালিকাভুক্ত হয় তখনই মূলত পুঁজিবাজার সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হয়। সে সময় বাজার বেশ রমরমা অবস্থায় চলছিল। তখনই মূলত পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত হই। যদিও গ্রামীণফোণের আইপিও পাইনি। শুরুতে বেশি কিছুদিন প্রাইমারি মার্কেটে ছিলাম। পরে ধীরে ধীরে সেকেন্ডারি মার্কেটের সঙ্গে জড়িয়ে যাই। ধীরে ধীরে নেশায় পরিণত হতে থাকে পুঁজিবাজার। অনেক পরে প্রথমবারের মতো একটি আইপিও পাই, মালেক স্পিনিংয়ের। বিক্রি করে বেশ লাভও হয়। এরপর  নেশা আরও বেড়ে যায়। ২০১০ সালের শেষের দিকে বাজারে একটি বড় ধস নামে। ধসের আগে চড়ামূল্যে শেয়ার কিনে একটি বড় ধাক্কা খাই, যা আজও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার বিজ: বর্তমান বাজার সম্পর্কে আপনার ধারণা একটু ব্যাখ্যা করুন

সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু: বর্তমান বাজার কোনো সূত্র বা অনুমোদিত বিধি মেনে চলে না। এটি বাজারের জন্য অবশ্যই নেতিবাচক দিক। তবে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাজারে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বর্তমানে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা যতটুকু করে তার চেয়ে বেশি করে ফাটকাবাজরা। ফাটকাবাজরাও ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই তাদের কাজ অব্যাহত রাখে। অনেক কিছু ম্যানেজ করেই তারা এসব করে। বর্তমানে বাজার আগের থেকে বেশ গতিশীল হয়েছে। তবে বাজারে এখন ভালো শেয়ারের অভাব রয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা দরকার। সরকারি শেয়ারগুলোকে বাজারে ছাড়া দরকার। আর এ বিষয়ে ওপর মহল থেকে অনেক কথা হলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখছি না।

শেয়ার বিজ: কোন ধরনের শেয়ারে আপনি বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন?

সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু: পেশায় ব্যাংকার বলে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতিই আগ্রহ বেশি। তাছাড়া অন্যান্য খাতের তুলনায় ব্যাংকের শেয়ার রাতারাতি ওঠানামা কম করে এবং এ খাতের শেয়ারদরও তুলনামূলক কম। ফলে অল্প পুঁজিতে অধিক শেয়ার সংগ্রহ করা সম্ভব। যে কারণে ব্যাংক খাতের ওপর আগ্রহ বেশি আমার। তবে অন্যান্য শেয়ারেও বিনিয়োগ আছে। যেমন: টেক্সটাইল, প্রকৌশল ইত্যাদি।

শেয়ার বিজ: শেয়ার কেনাবেচায় আপনি কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দেন? ফান্ডামেন্টাল মেনে চলেন কি?

সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু: খবরকে অবশ্যই প্রাধান্য দিই। মুদ্রিত এবং উড়ো দুই ধরনের খবরকেই প্রাধান্য দিই। কারণ অনেক সময় উড়ো খবরেই লাভের মুখ দেখা যায় বেশি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাও থাকে। অনেক সময় ফান্ডামেন্টাল মেনে চলা সম্ভব হয় না। কারণ সিংহভাগ ক্ষেত্রেই বাজার যৌক্তিক আচরণ করে না।

শেয়ার বিজ: গত এক বছরে আপনার পোর্টফোলিওতে লাভলোকসান কেমন?

সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু: কোনো কোনো শেয়ারে লাভের মুখ দেখলেও অধিকাংশ শেয়ারই পকেটের টাকা কেড়ে নিয়েছে। বাজার যদি স্থিতিশীল থাকত তাহলে হয়তো এমনটি হতো না। ফান্ডামেন্টাল দেখে শেয়ার সংগ্রহ করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। বাজারে কোনো শেয়ারের দর দুই-চার টাকা বাড়লেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বিভিন্ন তদন্ত ও জবাবদিহি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু অযৌক্তিক হারে শেয়ারদর কমলে কারও কোনো মাথাব্যথা থাকে না।

শেয়ার বিজ: ‘জেডক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগ করেন কি? করলে এর পক্ষে আপনার যুক্তি বলুন

সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু: ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারে অনেক সময়ই বিনিয়োগ করি। কারণ বাংলাদেশের স্টক মার্কেট কোনো নিয়ম মেনে চলে না। সেজন্য বাজারে অনেক কারসাজি হয়। সময়মতো খবর পাওয়া গেলে লাভ তুলে নেওয়া সম্ভব হয়। তাছাড়া যে শিক্ষার্থী ক্লাসে সব সময় এ প্লাস পায়, তার পেছনে অর্থ-সময় ব্যয় করলে তা থেকে প্রাপ্তি যোগ হয় সামান্যই। কিন্তু ‘সি’ গ্রেডের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে একই অর্থ-সময় ব্যয় করলে এ প্লাসে উন্নীত করা সম্ভব। শতকরা হিসাবে শেষোক্তটি অনেক বেশি রিটার্ন নিশ্চিত করে।

শেয়ার বিজ: বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার এখন অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে আকর্ষণীয় কি না?

সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু: বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার আকর্ষণীয়, তবে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও বিচক্ষণতা না থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাই বেশি।