আতাউর রহমান: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) ডেট সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ইস্যুকারী, উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের ঋণের অবস্থা যাচাই-বাছাই করতে হয়। যে ডেট সিকিউরিটিজ ইস্যুকারী, উদ্যোক্তা বা পরিচালক ঋণখেলাপি কি না বা তাদের ঋণ কী অবস্থায় আছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমন্বিত ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্য সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে ডিএসই। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইবি তথ্য যাচাইয়ের জন্য ডিএসইকে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সম্প্রতি এ বিষয়ে আবেদন জানিয়ে? একটি চিঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বরাবর পাঠিয়েছে ডিএসই। সেই সঙ্গে বিষয়টি ব্যাংকের সিআইবির স্ট্যাটিসটিক পরিচালক মো. আনিস উর রহমানকে অবহিত করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুমতি দিয়ে ডিএসইকে জানানো হয়।
ডিএসইর পক্ষ থেকে প্রশংসা গ্রহণ করার বিষয়ে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, এটা আনন্দদায়ক বা গৌরবজনক, দেশের মানি মার্কেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় অনলাইনভিত্তিক সিআইবি পরিষেবাকে বৈপ্লবিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে, যা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের ক্রমাগতভাবে বহুমুখী সুবিধা প্রদান করে চলেছে। আমরা আপনাকে জানাতে বা অবহিত করতে চাই, ডিএসই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড আইন অনুযায়ী, এটিবি বোর্ডের অধীনে ডেট সিকিউরিটিজের তালিকাভুক্তি অনুমোদন করে। তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়ার আগে ইস্যুকারী, উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের প্রবিধান অনুযায়ী ব্যাংকের খেলাপি নন সে বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে একটি অঙ্গীকার জমা দিতে হয়। পরবর্তীতে ডিএসইকে আবেদনকারীদের সিআইবি তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই এবং বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। তাই নিয়মিতভাবে সিআইবি তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুমতি চেয়েছে ডিএসই। সেই সঙ্গে ডিএসই নিশ্চিত করে তথ্যগুলো শুধু জাতীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে এবং এর গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা রাখা হবে বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, এটিবি বোর্ডে তালিকাভুক্তিতে শুধু ডেট সিকিউরিটিজের সিআইবি রিপোর্ট প্রয়োজন হয়। তাই সিআইবি রিপোর্ট যাচাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছিল এবং সেটার অনুমতি পাওয়া গেছে। এখন থেকে ডিএসই সিআইবি তথ্য যাচাই করতে পারবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এটিবি বোর্ডে লেনদেন শুরু হবে। প্রথমে একটি সিকিউরিটিজ নিয়ে লেনদেন শুরু হবে এবং আরও বেশি কিছু পাইপলাইনে রয়েছে যেগুলোর লেনদেন ধারাবাহিকতায় শুরু হবে। প্রথমে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়বে। সেটা দিয়েই এটিবি বোর্ডে লেনদেন শুরু হবে বলে জানিয়েছে তিনি।
প্রসঙ্গত, ব্যবসায় মূলধন প্রাপ্তি ও শেয়ারের মালিকানা পরিবর্তন সহজ করতে ডিএসই শিগগিরই চালু হচ্ছে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা বা এটিবি বোর্ড। ব্যবস্থাটি চালু হলে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা যেকোনো কোম্পানি এটিবিতে সরাসরি তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে অবশ্যই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তিত হতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের বাইরে দুই হাজারেরও বেশি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি চাইলে সরাসরি এটিবিতে নিজেদের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে।
এদিকে ডিএসইর এটিবি বোর্ডে শেয়ার লেনদেন শিগগিরই শুরু হচ্ছে বলে জানা যায়। লেনদেন চালু করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ডিএসই। তবে এটিবিতে ওটিসির কোনো কোম্পানি শিগগিরই এটিবিতে শেয়ার লেনদেনে অংশ নিচ্ছে না। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বন্ড ও শেয়ার নিয়ে আপাতত লেনদেন শুরু করতে চায় ডিএসই। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারিতেই এটিবিতে শেয়ার লেনদেন চালু করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, এটিবিতে লেনদেন শুরুর লক্ষ্যে ১২ ডিসেম্বর মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সচেতনতামূলক কর্মশালা করে ডিএসই। কর্মশালায় ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম সাইফুর রহমান মজুমদার শিগগিরই এটিবিতে লেনদেনের বিষয়ে ইঙ্গিত দেন।
গত ২৯ আগস্ট এ-সংক্রান্ত আইন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড) রেগুলেশন, ২০২২ অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। ২০ সেপ্টেম্বর যা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছে ডিএসই এবং বিএসইসি আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘এটিবি প্ল্যাটফর্ম রেগুলেশন’ অনুমোদন দেয়।
এদিকে এরই মধ্যে বিএসইসি ১৪টি বন্ডকে এ বোর্ডে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে এটিবিতে তালিকাভুক্তির জন্য কোম্পানির সিকিউরিটিজগুলো অত্যাবশ্যকীয়ভাবে ডিমেট ফর্মে থাকতে হবে এবং আইএফআরএস, আইএএস এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর বিধানগুলো পরিপালনে সক্ষম কোম্পানিগুলোকে এ বোর্ডে তালিকাভুক্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া এটিবিতে প্রাথমিক অবস্থায় মূলত ওটিসি মার্কেটে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন হবে। এজন্য গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮টি কোম্পানিকে ওটিসি থেকে এটিবিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় বিএসইসি।
এর আগে, ২০২১ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর এক নির্দেশনায় ওটিসি মার্কেট বাতিল করে বিএসইসি। ওটিসিতে থাকা ২৩টি কোম্পানিকে এসএমই বোর্ডে, ১৮টি কোম্পানিকে এটিবি বোর্ডে এবং ২৯টি কোম্পানিকে এক্সিট প্ল্যানের মাধ্যমে বাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ওটিসিতে থাকা ুুু৬টি কোম্পানি এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হয়েছে।