সিইসি নূরুল হুদাকে ‘খলনায়ক’ বললেন বদিউল আলম মজুমদার

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার কথার জবাব দিতে গিয়ে তাকে ‘খলনায়ক’ বললেন নাগরিক সংগঠন সুজন-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

ইসি গঠনের নতুন আইনে নূরুল হুদার মতো ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হল বলেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। দুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে বিদায়ী সিইসি নূরুল হুদার দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গতাল ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে সুজন। এতে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে বদিউল আলম টিআইবির গবেষণা, বিবিসির খবরের বরাত দিয়ে বলেন, ‘অনেক অনিয়ম হয়েছে। যেগুলোর বিচার হয়নি। বিচার করার অভিপ্রায়ও তাদের ছিল না। আমাদের দুর্ভাগ্য, এ রকম একজন খলনায়ককে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে আইনটা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এ রকম লোকদের নিয়োগ দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বিদায়ী সিইসি সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সমালোচনা করেন। বদিউল আলম মজুমদার বর্তমান কমিশনকে ‘অদক্ষ’ আখ্যা দিয়ে ভোটে ‘অনিয়ম’ ও নির্বাচন ব্যবস্থা ‘ভেঙে দেয়া’ সহ বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছেন।

সে প্রসঙ্গ টেনে নূরুল হুদা বলেছিলেন, সুজনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ নানা ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই সংগঠনকে কোনো কাজে সম্পৃক্ত করেনি বর্তমান ইসি। সেই কারণেই ইসির সমালোচনায় মুখর বদিউল আলম।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজনের সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এক কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগসহ কিছু কুরুচিপূর্ণ, অশালীন, অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। দেশের মর্যাদাপূর্ণ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে বসে তাকে এমন মিথ্যাচার করতে দেখে আমরা হতবাক। তার এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদেই আমাদের এ সংবাদ সম্মেলন।’

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘তাই সিইসি হুদাকেই এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। একই সঙ্গে জবাব দিতে হবে, তার কাছে এ সম্পর্কে কোনোরূপ তথ্য থাকলে তিনি কেন তা প্রকাশ করলেন না? কেন অভিযোগটি তদন্ত করলেন না? দুর্নীতি দমন কমিশনেই বা কেন তা প্রেরণ করলেন না?’

রিজওয়ানা বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সিইসির সমালোচনায় পড়েছেন বদিউল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘একটি বিতর্কিত নির্বাচনের অকাট্য কিছু প্রমাণ ও তথ্য প্রকাশ করায় সুজন ও বদিউল আলম মজুমদারের ওপর কে এম নূরুল হুদার ক্ষিপ্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বৈশাখী টেলিভিশনের আট পর্বের একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার যে আবেদন করেন, তাতে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ সুজনের অনেক নেতা ছিলেন স্বাক্ষরকারী। আর এ জন্যই সিইসি হুদার গাত্রদাহ এবং তার অপকর্ম ও পক্ষপাতদুষ্টতার কলঙ্ক আড়াল করতেই-যে কলঙ্ক বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেÑতিনি আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।’

লিখিত বক্তব্যে সিইসির সব অভিযোগ ও সুজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্যের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। সুজন সম্পাদক সিইসির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবে কি না প্রশ্ন করা হলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আদালতে গেলে রিমেডি পাওয়া যাবে কি না? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা বিবেচ্য বিষয়। তবুও আলোচনা করব। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই মানহানি হয়েছে। শুধু আমার নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের মানহানি হয়েছে।’

সুজন কাজ পাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে, কথা বলেছেÑএমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘সুজন কোনোদিনই বা আমি নিজে বা আমাদের প্রতিনিধি কাজ পাওয়ার ব্যাপারে কোনো আলাপ হয়নি। চিঠিও দেয়নি। চিঠি দেয়া হলে প্রকাশ কররেন না কেন। এসব বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

সংবাদ সম্মেলনে ইসির সাবেক আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার যা বলেছেন, আমি আশ্চর্য হইনি। একটা পদে থাকলে তার যখন সমালোচনা করা হয়। সমালোচনার পাল্টা যদি কোনো সদুত্তর না থাকে, কৃতকার্যের ব্যাখ্যা না থাকে, তবে সবচেয়ে সহজ পন্থা হল, সমালোচনা এড়িয়ে গিয়ে সমালোচককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অনেক সময় এটা আমরা মেনে নেই। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদের অধিষ্ঠিত ব্যক্তির কাছে এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। আশ্চর্য হইনি, এভাবেই পাঁচ বছর কাটিয়েছেন। যত সমালোচনা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা পক্ষপাতিত্ব হোকে কখনোই ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। অসম্ভব বক্তব্য ছিল পাঁচ বছরের অন্যতম প্রধান কাজ। আশা করব, তার কৃতকার্যের জন্য, নির্বাচনেকে নির্বাসনে পাঠানোর জন্য আমরা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ যে এনেছি, আমার নিশ্চিত বিশ্বাস এজন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘বর্তমান সিইসি নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের যে দুর্নাম জুটিয়েছেন তার জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০