সিএনজি স্টেশন বন্ধে ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য রাজধানীর সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীতে ভোগান্তিতে পড়ে বিভিন্ন চাকুরে, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ঢাকা ফেরত জনগণকে পড়তে হয় বড় ধরনের ঝামেলায়। গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। গতকাল বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত এসব স্টেশন বন্ধ ছিল।

ঈদের আগে তিতাস গ্যাস লিমিটেড এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কোম্পানিটির অধীনে থাকা সব সিএনজি ফিলিং স্টেশন মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে। তবে ২৩ জুন থেকে আগামী ৩ জুলাই পর্যন্ত বাকি দিনগুলো তিতাস গ্যাসের আওতাভুক্ত সব সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।

ঈদের ছুটির এ সময় রাজধানীতে এমনিতে কম থাকে গণপরিবহন। আর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা কম ছিল। তবে, যারা আগের রাতে গ্যাস নিয়ে রেখেছিলেন তারাও ভাড়া হাঁকিয়েছেন সাধারণ ভাড়ার থেকে দ্বিগুণ।

ঈদের ছুটি শেষে ময়মনসিংহ থেকে আসা মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে জানান, আমার বাসা রামপুরায়। অন্যান্য দিনে ট্রেনে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে রামপুরায় সিএনজি ভাড়া গুনতে হয় ৩০০ টাকা। অথচ বুধবার ৩০০ টাকার ভাড়া গুনতে হয়েছে ৫৫০ টাকা।

ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলা হলে তারা জানায়, গ্যাস না থাকায় রাস্তায় যাত্রীর তুলনায় গাড়ি অনেক কম। ভাড়া বেশি হলেও যাত্রী পেতে সমস্যা হচ্ছে না।

এদিকে যাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দীর্ঘক্ষণ ধরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে গাড়ি না পেয়ে শেষমেশ সিএনজির বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

বাড্ডা লিংক রোড থেকে মৌচাকে আসা আয়রিন জানান, মৌচাকে তার অফিস হওয়ায় প্রায় প্রতিদিন সিএনজিতে আসেন। তিনি জানায়, ঈদের এক সপ্তাহ আগেও লিংক রোড থেকে মৌচাকে এসেছি ১৫০ টাকা দিয়ে। একই দূরত্বের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা।

বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বাড্ডার সিএনজি চালক মামুন হোসাইন বলেন, সিএনজিতে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার গ্যাস নিতে হয়। মঙ্গলবার থেকে গ্যাস দেওয়া বন্ধ। আগে যারা গ্যাস নিয়ে রেখেছে তারাই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন। জমার টাকা তুলতে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য উৎপাদন বন্ধ থাকায় বুধবার প্রথম প্রহর থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ওই ঘোষণা আসার পর গ্যাসের জন্য ফিলিং স্টেশনগুলোয ভিড় লেগে যায়। কিন্তু রাত ১২টায় ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেওয়ায় গ্যাস না পেয়েই অনেককে ফিরতে হয়।

টঙ্গী-যাত্রাবাড়ী রুটের তুরাগ পরিবহনের বাসচালক শামছুল শেয়ার বিজকে জানান, আজ কোনো গ্যাস নিতে পারিনি। সকাল থেকে দুই ট্রিপ দিয়েছি। গ্যাসের সংকট থাকায় ট্রিপ কম দিয়েছি।

সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চালক বাদশা আলম জানান, রাতে খবর পাওয়ার পর গ্যাস নিতে ফিলিং স্টেশনে গেলেও লম্বা লাইনের কারণে নিতে পারেননি। আগের দিনের যতটুকু গ্যাস গাড়িতে আছে, তা দিয়ে সারাদিন চালানো যাবে না।

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, ঈদে বাড়ি যাওয়া এবং বাড়ি থেকে ফেরার সুবিধার জন্য সরকার ২৪ ঘণ্টা পাম্প খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ঈদের একদিন পরই ২৪ ঘণ্টা ফিলিং স্টেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত দিল। সরকারের এ সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক।

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে যে সমস্যা হচ্ছে, তাকে ‘সাময়িক’ বলে উল্লেখ করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব জানিয়েছেন।

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র বন্ধ থাকার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বেশ আগে থেকেই জানিয়ে আসছিলাম, বিবিয়ানা রক্ষণাবেক্ষণে যাবে। ঈদের আগে থেকেই সবাইকে জানিয়ে আসছি। পত্রিকা-টেলিভিশনেও তথ্য গেছে। এটা খুব বেশি ক্ষণ নয়। মাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বড় চিন্তা ছিল পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে। আমরা দেখেছি, বিদ্যুৎ কোনো সমস্যা নেই। আমরা ঠিকমতো বিদ্যুৎ দিতে পারছি।

 

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০