কেন্দ্রীয় ব্যাংক করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে ব্যয় বৃদ্ধির যে আহবান জানিয়েছে, সেটাকে আমরা যথার্থ মনে করি। এ খাতে বরাদ্দ বাড়লে এবং তার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে দেশে এ শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। প্রত্যাশা থাকবে, প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ যথাযথভাবে পরিপালন করবে। সিএসআর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তহবিল ব্যয় করে নানা ক্ষেত্রে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হলে এ খাতে তহবিল ঘাটতির যে অভিযোগ মাঝেমধ্যে শোনা যায়, সেটাও কমে আসবে। নির্দেশনা অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে কি না, সেদিকে এবং অর্থ সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিও এক্ষেত্রে কাম্য।
বস্তুত পর্যটন বিকাশের জন্য প্রথমেই দরকার তথ্যভাণ্ডার। এটি গঠনে আমরা যে এখনও নিকটবর্তী কিছু দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছি, সেটা সবার জানা। হাতে থাকা তথ্যও সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা যায় না পর্যাপ্ত জনবল ও অবকাঠামোর অভাবে। পর্যটক আকর্ষণে তথ্য হালনাগাদ থাকার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেটের যুগে কোনো পর্যটনকেন্দ্র সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন না করে এখন কেউ ভ্রমণে যায় না। এজন্য আমরা চাইব, সিএসআর খাত থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ শুরুতেই ব্যয় করা হবে তথ্যভাণ্ডার গঠন ও এর মানোন্নয়নে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর ডকুমেন্টারি আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করে প্রচারের ব্যবস্থা করা গেলে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে স্বভাবতই। এ খাতের বিকাশে দেশের অনালোচিত বা অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে সামনে আনার জন্য সিএসআর খাত থেকে বরাদ্দ জোগানো এবং তা ব্যবহারের বিষয়টিও ভেবে দেখতে পারেন নীতিনির্ধারকরা।
দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কিছু কেন্দ্র ঘিরে যেমন পর্যটক আকর্ষণ সম্ভব ছিল, সেক্ষেত্রে আমরা কিন্তু সফল হতে পারিনি। এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশ এমন কেন্দ্রে পর্যটক আকর্ষণের মাধ্যমে আয় করছে প্রচুর। আমাদের দেশের এ ধরনের কেন্দ্রে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে চাইলে অবকাঠামো উন্নয়ন আর নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে। আমরা চাইব, সিএসআর তহবিল থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ এসব কেন্দ্রের সৌন্দর্যবর্ধনেই শুধু ব্যয় না হোক; প্রতিটি কেন্দ্রের প্রচারের জন্য যে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন, সেক্ষেত্রেও ব্যয় হোক অর্থ। তাহলে এর দীর্ঘমেয়াদি সুফলও পাওয়া যাবে। জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সিএসআর তহবিল থেকে বরাদ্দের ভেতর দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে ওই লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হলে তাতে কর্মসংস্থানও হবে বেশ কিছু মানুষের। বর্তমানে যারা কর্মরত, তাদের আয়ও বাড়বে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আমরা চাইব, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়া এমন পদক্ষেপ মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি আনতে জোগাবে সহায়তা।
Add Comment