নিয়াজ মাহমুদ: বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে গঠিত ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডের জন্য নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমোদনের জন্য তিনজনের নাম সুপারিশ করে সিএসই চিঠি পাঠিয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া বিতর্কিত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কেএ মুবিন।
গত ২৪ মে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার স্বাক্ষরিত বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক প্রস্তাবনায় তার নাম উল্লেখ করা হয়। এ তালিকায় থাকা বাকি দুজন হচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ এ হোসাইন ও সিনিয়র আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ। কমিশন সিএসই ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এ তিনজনের মধ্যে থেকে একজনকে অনুমোদন দেবে।
উল্লেখ্য, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ‘ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড’ রয়েছে। প্রতিবছরই বাড়ছে ফান্ডের স্থিতি। ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ট্রেকহোল্ডাররা কোনো দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। আর এ ফান্ড পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের কথা রয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড রেগুলেশন-২০১৪-এ।
আইন অনুযায়ী, সিএসই ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড ট্রাস্টি বোর্ড হবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমোদিত। ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন একজন। ২০১৭ সালের জন্য ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে তিনজনের নাম প্রস্তাব করেছে সিএসই। এর মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যানের জন্য অনুমোদন দেবে বিএসইসি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিএসইসির ৬০৬তম কমিশন সভায় এ বিষয়টি উত্থাপিত হবে। এর আগে ৮ জানুয়ারি সিএসইর ৫১তম পর্ষদ সভায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড রেগুলেশন-২০১৪-এর ৫.১ অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এ তিনজনের নাম চূড়ান্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, সিএসইর সুপারিশকৃত নামের তালিকায় রয়েছে অপারেশন বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কেএ মুবিন। এছাড়া তিনি পেনিনসুলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও ন্যাশনাল টি কোং লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। সরকারের সাবেক এই সচিব বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত ইউনাইটেড এয়ারের শীর্ষস্থানীয় এই নির্বাহীর নাম থাকায় এ নিয়ে বিএসইসিসহ পুঁজিবাজারে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যদিও আবুল কেএ মুবিনের ব্যক্তি ইমেজ ভালো। তবুও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় এমন একটি কোম্পানির প্রতিনিধি দায়িত্ব পেলে ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড ট্রাস্টি বোর্ড প্রশ্ববিদ্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিএসইর এই ফান্ডে জমা হয়েছে এক কোটি ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ১২০ টাকা। তবে ক্ষতিপূরণের আবেদন না করায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে কোনো টাকাই বিতরণ হয়নি। ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডের উদ্দেশ হলো, ট্রেকহোল্ডাররা কোনো দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। এ রেগুলেশনে বিনিয়োগকারীদের দাবি মেটাতে ব্যর্থ ট্রেকহোল্ডারদের জমাকৃত সিকিউরিটিজ অবলোপন করার ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জ সংরক্ষণ করে।
বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রেকহোল্ডার ব্যর্থ হলে ওই ফান্ড থেকে তা সরবরাহ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় রেগুলেশন সংশোধন করে তা শক্তিশালী ও হালনাগাদ করা হয় ২০১৪ সালে।
নতুন ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড রেগুলেশন অনুযায়ী, সব ট্রেকহোল্ডারকে এ ফান্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। যদি কোনো ট্রেকহোল্ডার ফান্ডে অংশগ্রহণ না করে তাহলে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তার ট্রেডিং রাইট বন্ধ রাখা হতে পারে। টাকা জমা দিলে তা প্রত্যাহার করা হবে।
এ ফান্ড বিএসইসির অনুমোদিত ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হবে। ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন একজন। স্টক এক্সচেঞ্জ পর্ষদের অনুমোদিত তিনজনের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান হবেন। আর ট্রাস্টি বোর্ডে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দুজন মনোনীত পরিচালক থাকবেন। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে একজন থাকবেন। ফান্ড ব্যবস্থাপনার যাবতীয় সব দায়িত্ব থাকবে ট্রাস্টি বোর্ডে। বোর্ডকে বছরে তিনটি বৈঠক করতে হবে; যা একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে করতে হবে।
রেগুলেশন অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিটি প্রান্তিকের শেষে লিস্টিং ফির ০.৫০ শতাংশ ফান্ডে জমা দিতে হবে। এছাড়া লেনদেনের ওপর প্রতি প্রান্তিকে ১০ লাখ টাকায় এক টাকা দিতে হবে ট্রেকহোল্ডারদের। ফান্ড গঠনের শুরুতে যেসব ট্রেকহোল্ডার সম্পৃক্ত থাকবে তারা এ সুবিধা ভোগ করবেন। পরবর্তী সময়ে কোনো ট্রেকহোল্ডার ওই ফান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাদের অতিরিক্ত এক লাখ টাকা দিতে হবে। এ ফান্ডের টাকা যে কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে। তবে ফান্ডের টাকা দিয়ে শেয়ার ব্যবসা করা যাবে না।
একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। তবে ফান্ডের বোর্ডের চেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করলে বিনিয়োগকারী তা পাবেন।