নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের বাজেট প্রস্তাবে সিগারেটের ওপর কর হার বৃদ্ধির প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস
বিজ্ঞপ্তিতে তারা একথা জানায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দীর্ঘদিন পর ওপরের তিনটি স্তরের সিগারেটের করহার এক শতাংশ বৃদ্ধি এবং নিম্নস্তরের সিগারেটের করহার গত বছরের চেয়ে দুই শতাংশ বৃদ্ধিকে রাজস্ব আদায় ও কোম্পানির মুনাফা হ্রাসের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে তামাকবিরোধী এই দুটি সংগঠন।
তাদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরও বলা হয়েছে, কর হার বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও সামান্য মূল্য বৃদ্ধি তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর অবদান রাখবে না। বাজেটে নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শলাকায় বৃদ্ধি মাত্র ৫০ পয়সা। এই বৃদ্ধি তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর অবদান রাখবে না। প্রতি শলাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধির সুযোগে তামাক কোম্পানি বাজারে প্রতি শলাকার মূল্য এক টাকা বাড়িয়ে দেবে, যা তামাক কোম্পানির অযাচিত মুনাফা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে। বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব মেনে এই স্তরের সিগারেটের মূল্য ৬০ টাকা এবং কর হার ৬৩ শতাংশ করা হলে তা ধূমপান কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব বৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রে সুম্পষ্ট অবদান রাখত।
এছাড়া মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য মাত্র তিন টাকা (৪.৪৫ শতাংশ) বাড়িয়ে ৭০ টাকা এবং উচ্চস্তরে সাত টাকা (৬.১৯ শতাংশ) বাড়িয়ে ১২০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ গত অর্থবছরে তামাক কোম্পানিগুলো নিজেরাই উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করে বাজারজাত করেছে। অন্যদিকে অতিউচ্চ স্তরে ১০ শলাকার মূল্য ১০ টাকা (৬.৬৭ শতাংশ) বাড়িয়ে ১৬০ টাকা করা হয়েছে। এ স্তরেও গত অর্থবছরে তামাক কোম্পানি এটাকে ১৫৫ টাকা ধার্য করে সিগারেট বাজারজাত করেছে। এগুলো তারা বিক্রি করেছে আরও বেশি মূল্যে। সেই সঙ্গে এক বছরের মূল্যস্ফীতি ও মানুষের ক্রয়সামর্থ্য বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে এই মূল্য সিগারেটকে আরও সস্তা করে তুলবে। এই ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি ধূমপান কমাতে অবদান রাখবে না। বরং বর্ধিত মূল্য থেকে তামাক কোম্পানির অংশ বৃদ্ধি এবং খুচরা শলাকায় মূল্য বৃদ্ধির ফাঁদে ফেলে তামাক কোম্পানি তার মুনাফা বাড়িয়ে নেবে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা, তার বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করবে বলেও মনে করে বাটা ও বিএনটিটিপি।
জর্দার প্রতি ১০ গ্রামের দাম ৪৫ টাকা থেকে মাত্র তিন টাকা বাড়িয়ে ৪৮ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের দাম ২৩ টাকা থেকে দুই টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে আগের মতো ৫৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং বিড়ির মূল্য ও করহারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এর ফলে জর্দা, গুল ও বিড়ির ব্যবহার বাড়বে, যা একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাজেট প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনটিটিপির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারের বাজেটেও তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে ত্রুটিপূর্ণ অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে। অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা হলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর অবদান রাখত। পাশাপাশি তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমত। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর যে মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে তামাক কোম্পানির মুনাফা বাড়বে। মূল্যস্ফীতি ও মানুষের ক্রয়সামর্থ্য বৃদ্ধি অনুযায়ী দাম বাড়ানোর সুযোগ ছিল। যে মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে, এখনই বাজারে এর চেয়ে বেশি মূল্যে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। ফলে এটি তামাকের ব্যবহার কমাতে অবদান রাখবে না, যা দেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর বরাবরের মতো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব অনুসারে ‘বাজেট প্রস্তাব’ সংশোধনের পরামর্শ দেন।
