Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:48 am

সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছে সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তবে ২০২১ সালের তুলনায় কম। দেশটির সরকারি তথ্যে দেখা গিয়েছে, বিশ্লেষকরা ধীরগতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেছেন; কেননা এতে মন্দার আশঙ্কা রয়েছে। খবর: ডেইলি সাবাহ।

সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। ২০২১ সালের তুলনায় যা প্রায় অর্ধেকÑসে বছর প্রবৃদ্ধি বেড়েছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে ২০২২ সালে প্রত্যাশার তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশে।

সিঙ্গাপুরে গত বছরের শেষ তিন মাসে শিল্পোৎপাদন খাতে ধীরগতি দেখা যায়। এ খাতের বাজার ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়। গত নভেম্বরে ইলেকট্রনিকস খাতের মন্দা শিল্পোৎপাদনে ধস নামায়। সে মাসে মোট শিল্পোৎপাদন এক বছর আগের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমে। এ পতনের হার অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস ১ দশমিক ১ শতাংশের চেয়ে বেশি। এর আগের মাসে এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশটির উৎপাদন খাত সংকুচিত হয়। সে সময় সংকোচনের হার ছিল শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও প্রাথমিক প্রতিবেদনে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ সংকোচনের কথা বলা হয়েছিল। অক্টোবরেও শিল্পোৎপাদন সংকোচনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে ইলেকট্রনিকস খাত। বিশ্বজুড়ে ইলেকট্রনিকসের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ খাতের উৎপাদন বার্ষিক ভিত্তিতে অর্থাৎ এক বছর আগের তুলনায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়। এছাড়া দেশটির সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন সে সময় ১৪ শতাংশ কমে।

সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চতুর্থ প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ২ শতাংশ, যা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রান্তিকে ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায় এবং অনেক দেশের সরকার সুদহার বাড়াতে বাধ্য হয়। এর ব্যতিক্রম হয়নি সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রেও। দেশটির অন্যতম রপ্তানি পণ্য কম্পিউটার চিপস ও এ ধরনের পণ্য রপ্তানি কমে আসে। কেননা মূল্যস্ফীতি ও সুদহারের কারণে বিশ্বে ২০২২ সালে এসব পণ্যের চাহিদা কমে।

নগররাষ্ট্রটির অর্থনৈতিক পারফরমেন্স বিশ্বে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। দেশটির গোটাবিশ্বের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, এ কারণে বিশ্বে তাদের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

অনলাইন ট্রেডিং ফার্ম আইজির বাজার বিশ্লেষক ইয়াপ জুন রং এক বিবৃতিতে বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে নির্দেশ করে, তবে সামগ্রিক প্রবণতা নেতিবাচক।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকস জানিয়েছে, চলতি বছর বিশ্বে মন্দা দেখা দিতে পারে। এ কারণে বিশ্বে রপ্তানি কম গত বছরের তুলনায় আরও কমে আসবে। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, সুদহার বাড়বে, সঞ্চয় কমবে ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে আসবে।

সিআইএমবি প্রাইভেট ব্যাংকের আঞ্চলিক অর্থনীতিবিদি সং সেং য়ুন বলেন, সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি গতি হারালেও বেশ ভালো করেছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, আমরা বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং নববর্ষে দেয়া এক বার্তায় বলেন, চলতি বছর প্রবৃদ্ধি থাকবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উদ্বেগজনক। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভালো ফল দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। চীন কত দ্রুত কভিড-১৯ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারে তা দেখার বিষয়। একই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মন্দায় আক্রান্ত হতে পারে। এসব কারণে আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।