নিজস্ব প্রতিবেদক: সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় নাম এসেছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের। অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বস এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিকস, কমিউনিকেশনস, হসপিটালিটি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, রিয়েল এস্টেট খাতে ব্যবসা করছে সামিট গ্রুপ। সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি। তবে ফোর্বস যে তালিকা করেছে তা গ্রুপটির বাংলাদেশের সম্পদমূল্য হিসাব করে করেছে বলে দাবি করেছেন আজিজ খান।
এ বিষয়ে আজিজ খানের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি এক ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে শেয়ার বিজকে জানান, দেশের বাইরে আছেন। ক্ষুদে বার্তায় তিনি লেখেন, ‘আমাদের সব বিনিয়োগ বাংলাদেশে। আমাদের বাংলাদেশের সম্পদ মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দিয়েছে ফোর্বস। ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, এলএনজি আমদানি, সংরক্ষণ ও বিতরণ খাতে আরও দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।’
ফোর্বস জানিয়েছে, আজিজ খান গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। গত জুলাই পর্যন্ত হিসাবে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৯১ কোটি ডলার। এ পরিমাণ সম্পদ নিয়ে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় আজিজ খানের নাম স্থান পেয়েছে ৩৪ নম্বরে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জে (এসজিএক্স) তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের জন্য এসজিএক্স থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চায় আজিজ খানের এ কোম্পানি।
গত ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অনেক ছোট, আর আমাদের বিনিয়োগের জন্য আরও অনেক বেশি অর্থ প্রয়োজন। সিঙ্গাপুর একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য এটি একটা ভালো জায়গা।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ফারুক খানের ভাই আজিজ খান। তার পিতাও একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ফারুক খান ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
দুই বছর আগে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসে (আইসিআইজে) প্রকাশিত অফশোর লিকস ডেটাবেজে আজিজ খান ও তার পরিবারের সদস্যদেরও নাম আসে। তবে সামিট চেয়ারম্যান সে সময় কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে।
সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের সিঙ্গাপুর হেডকোয়র্টারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে আছেন আজিজ খানের মেয়ে আয়েশা আজিজ খান। আজিজ, ফারুকের আরেক ভাই জাফর উমেদ খানও এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আছেন।
জানা গেছে, প্রথমে ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবসায় নেমে দ্রুত উন্নতি হতে থাকে সামিটের। ১৯৯৮ সালে সামিটের প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যায়। বর্তমানে সামিটের ১৭টি কেন্দ্রের এক হাজার ৬৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। এটি বেসরকারি খাতে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ২১ শতাংশ ও দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯ শতাংশ বলে উল্লেখ রয়েছে গ্রুপটির ওয়েবসাইটে।
সামিট পাওয়ার গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) এবং জাপানের মিৎসুবিশি করপোরেশনের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এর আওতায় দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, দুটি এলএনজি টার্মিনাল, একটি তেলের টার্মিনাল এবং একটি এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।