সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং অভিযান ১০০ কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মানি লন্ডারিংবিরোধী অভিযানে সিঙ্গাপুরে বিদেশ থেকে পাচার করে আনা প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের অর্থ-সম্পদ জব্দ করেছে সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ)। এ অভিযানকে দেশটির ইতিহাসে মানি লন্ডারিংবিরোধী সবচেয়ে বড় অভিযানগুলোর একটি বলা হচ্ছে। খবর: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

অভিযান চালিয়ে পুলিশ অর্থ, বিলাসবহুল গাড়ি, অলংকার, হাতব্যাগ, ঘড়ি, মদ, মোবাইল ফোন, কম্পিউটারসহ নানা জিনিস জব্দ করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে নারীসহ ১০ জনকে। তাদের প্রায় সবাই বিদেশি। আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। এর বাইরে আটজন সন্দেহভাজন পলাতক। তাদের নাম পুলিশের তালিকায় রাখা হয়েছে। এ ব্যক্তিরা ধনী এলাকার বাসিন্দা। তারা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন, বিলাসী জীবনযাপন করতেন।

এসপিএফ জানায়, তারা আগে থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ লেনদেনের তথ্য পেয়েছিল। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লেনদেনের সন্দেহভাজন জাল নথিও ছিল। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সিঙ্গাপুরজুড়ে একযোগে অভিযানে নামেন এসপিএফের সদস্যরা। মঙ্গলবার পুলিশ সিঙ্গাপুরের ট্যাংলিন, বুকিট টিমাহ, অরচার্ড রোড, সেন্তোসা, রিভার ভ্যালিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের পর গত বুধবার রাতে ১ নারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিঙ্গাপুর পুলিশ। তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে একই রাতে। তাদের বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে।

৪০০ জনের বেশি সদস্যের বড় একটি দল এই অভিযানে অংশ নেন। এতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বাণিজ্যিবিষয়ক বিভাগ (সিএডি), দাঙ্গা পুলিশের বিশেষ বাহিনী, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা যুক্ত ছিলেন। যেসব বিদেশির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে, তারা নিজ দেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই সঙ্গে তারা অনলাইন জুয়া খেলার সঙ্গেও জড়িত। সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদন (এসটিআর) হাতে পেয়ে বিশদ অনুসন্ধানের পরই পুলিশ তাদের শনাক্ত করেছে।

সিঙ্গাপুরের মনিটারি অথরিটি (এমএএস) বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, সন্দেহজনক তহবিল ও সম্পদ শনাক্তের বিষয়ে সংস্থাটি সিএডির সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। অবৈধ লেনদেন প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিঙ্গাপুরের পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবারের অভিযানে ৯৪টি জমি এবং ৫০টি গাড়ির নামে নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করা হয়েছে।

এর অর্থ হলো, মালিকরা এসব জমি ও গাড়ি বিক্রি করতে পারবেন না। এসব জমি ও গাড়ির মোট মূল্য ৮১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি। এছাড়া বিপুল পরিমাণ মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে।

অভিযানে ৩৫টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এসব অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ডলারের বেশি অর্থ জমা রয়েছে। এছাড়া জব্দের তালিকায় রয়েছে অনলাইনে সম্পদ থাকার ১১টি নথি, ২টি সোনার বার, ২৫০টির বেশি দামি ব্যাগ ও ঘড়ি, ১২০টির বেশি মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার, ২৭০টির বেশি দামি অলংকার। অভিযানে জব্দ করা অর্থের পরিমাণ ২৩ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বেশি।

আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ বছর বয়সী সাইপ্রাসের একজন নাগরিক রয়েছেন। তিনি বুকিট টিমাহ এলাকার অভিজাত একটি বাংলোয় বসবাস করতেন। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ ডলারের অর্থ জব্দ করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে তার ১৩টি স্থাবর সম্পত্তি ও ৫টি গাড়ির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এসব সম্পত্তি ও গাড়ির মূল্য ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বেশি। তার নামে থাকা চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে ৬৭ লাখ ডলার আছে। আরও জব্দ করা হয়েছে বেশ কিছু দামি অলংকার ও মদের বোতল।

সিএডির পরিচালক ডেভিড চেউ বলেন, সিঙ্গাপুর যাতে পাচার করা অর্থের গন্তব্য না হয়, সে জন্য এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শনাক্ত ও প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটগুলো একযোগে কাজ করছে। সিঙ্গাপুরকে অপরাধীদের বা তাদের পরিবারের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা এবং এখানকার ব্যাংকিং সুবিধার অপব্যবহার ঠেকাতে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০