Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 4:22 am

সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং ৬২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ইস্টার্ন রিফাইনারির বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পের জন্য টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে শক্তিশালী টাগবোট সংগ্রহ করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এছাড়া টাগবোট পাইলটিং এবং আনুষঙ্গিক সেবাসহ সবমিলিয়ে খরচ ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর জন্য ইপিসি ঠিকাদার চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে সাপ্লিমেন্টারি চুক্তি করার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বিদেশ থেকে বড় বড় জাহাজে করে আমদানি করা অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি তেল ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে খালাস করা হয়। এতে সময় লাগে অনেক বেশি, যা আবার সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। এমন দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সময় ও অর্থের অপচয় বেশি হয়। এর জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। এ প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নেয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে করে জ্বালানি তেল পরিবহনে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে নগরীর পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারির মধ্যে পাইপ সংযোগ তৈরি করা হয় হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হয় কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। এসপিএম পুরোপুরি চালু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা। আর ইস্টার্ন রিফাইনারির বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পের জন্য টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে শক্তিশালী টাগবোট সংগ্রহ, পাইলটিং এবং আনুষঙ্গিক সেবাসহ সবমিলিয়ে ৬২ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা আরেকটি সম্পূরক চুক্তির অনুমোদন অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ কমিটি ইপিসি ঠিকাদার চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে সাপ্লিমেন্টারি চুক্তি করার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

ইস্টার্ন রিফাইনারির কর্মকর্তারা জানান, সাগরে বড় বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে জ্বালানি তেল খালাস করা হতো। এতে সময় লাগত ১৫ থেকে ১৬ দিন। আর সময় ও অর্থের ব্যয় হতো প্রচুর। এখন ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম)’ অর্থাৎ পাইপলাইন তেল খালাসে সময়

লাগবে মাত্র ৩৬ থেকে ৪৮ ঘন্টা। এর মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজ থেকে মহেশখালী অংশে পাইপলাইনে তেল পরিবহন করা হয়। এখন মহেশখালী পাম্প স্টিশন থেকে ইষ্টার্ন রিফাইনারির ডিপোতে তেল পরিবহন পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা ও পরিচলন) খালেদ আহম্মেদের ব্যবহƒত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সংযোগ রিসিভ করেননি। ফলে উনার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় বড় জাহাজগুলো থেকে তেল সরাসরি খালাস করা সম্ভব হতো না। ফলে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছোট লাইটারেজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ খালাসে ১০-১১ দিন এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলবাহী জাহাজ খালাসে ৪-৫ দিন সময় লাগে। আর পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে গ্রাহকের কাছে তেল পৌঁছাতে সময় লাগে ১৬ থেকে ২০ দিন।