নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থ আত্মসাতের দায়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মোবাইল কোম্পানি সিটিসেলের নামে ব্যাংক ঋণ নিয়ে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানী থানায় মামলা দায়ের করে কমিশন।
কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য শেয়ার বিজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুদকের উপপরিচালক শেখ আবদুস ছালাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মোরশেদ খান ছাড়াও তার স্ত্রী নাসরিন খানসহ আরও ১৫ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী ছাড়াও মামলায় পিবিটিএলের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের জড়িতদের আসামি করা হয়েছে।’ মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের কোম্পানির নাম প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড (পিবিটিএল)।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সিটিসেলের নামে আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা।
দেনার দায়ে গত বছরই বন্ধ হয়ে যায় সিটিসেল, যে কোম্পানির হাত ধরে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল) নামে টেলিকম সেবা পরিচালনার লাইসেন্স পায় বর্তমান সিটিসেল। পরের বছর হংকং হাচিসন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিটিএল নাম বদলে হয় হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল)। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় আবার পরিবর্তন আসে। সে সময় তা কিনে নেন মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মোটরস ও ফারইস্ট টেলিকম মিলে এইচবিটিএলের শেয়ার কিনে নেয়। কোম্পানির নাম বদলে হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, ব্র্যান্ডিং শুরু হয় সিটিসেল নামে।
বিএনপি সরকার আমলে এ কোম্পানিটি বেশ ব্যবসা করেছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আরও কিছু কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হলে কোম্পানিটির একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটে। পরবর্তী সময় থেকে ধুঁকতে থাকা এ কোম্পানিতে ২০০৪ সালে বিনিয়োগ করে সিঙ্গাপুরের সিংটেল। কিন্তু ব্যবসার আর প্রসার ঘটেনি।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক মোরশেদ খানের প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেড।
উল্লেখ্য, মোর্শেদ খান ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাপানে উচ্চশিক্ষিত মোর্শেদ খান দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান তার বেয়াই। সালমানপুত্র সায়ান রহমানের সঙ্গে মোর্শেদ খানের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মোর্শেদ খান বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকের অন্যতম পথিকৃৎ। তার হাত দিয়েই দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশে অটোমোবাইল ব্যবসায়েও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক মোটর্স জাপানি অটোমোবাইল ব্র্যান্ড নিশান, কোরিয়ান ব্র্যান্ড হুন্দাইয়ের অন্যতম পরিবেশক।