হামিদুর রহমান: বন্ধ থাকা দেশের পুরোনো মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের সরকারের বকেয়া বাবদ ১২৮ কোটি টাকা প্রদানের জন্য আবারও নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর আগে কয়েক দফায় বকেয়া প্রদানের নোটিশ করেও ব্যর্থ হয় বিটিআরসি। তবে অর্থ প্রদান না করায় এবার লাইসেন্স বাতিল নিয়ে ভাবছে বিটিআরসি।
সম্প্রতি বিটিআরসি’র উপপরিচালক (রাজস্ব) মো. হাসিবুল কবির স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ প্রদান করা হয় সিটিসেলকে। নোটিশে বলা হয়, প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (পিবিটিএল)-সিটিসেল এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ম্যাটার নং- ১৬৭/২০১৫ এবং আপিল মামলা নং-২৭৮২/২০১৬-এর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বকেয়া নির্ধারণের জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন এবং ওই কমিটি কর্তৃক বকেয়া নির্ধারণই চূড়ান্ত হবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেন। একই সঙ্গে ওই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী কোনো বকেয়া থাকলে তা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়ে মামলাটি ডিসপসেড অফ করেন। তদানুযায়ী ওই কমিটির ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই দাখিলকৃত রিপোর্ট অনুযায়ী, সিটিসেলকে আরও ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা কমিশন/পরিশোধ করতে হবে।
পরবর্তীতে সিটিসেল কর্তৃক ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর প্রদত্ত অর্ডার মডিফিকেশন করার জন্য আবেদন করা হলে আপিল বিভাগ উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনানির জন্য ২০১৮ সালের ২২ মে ওই মডিফিকেশন আবেদনটি রিজেক্ট করে একটি আদেশ প্রদান করেন।
নোটিশে আরও বলা হয়, আদালতের আদেশ অনুযায়ী যেহেতু কোনো স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়নি, সেহেতু কমিটি রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সিটিসেলের কাছে কমিশনের পাওনা ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকাসহ অদ্যাবধি পর্যন্ত মোবাইল অপারেটর গাইডলাইন ও লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী পরিশোধযোগ্য ফিস ও চার্জ বাবদ বিটিআরসি তথা সরকারের সমুদয় বকেয়া ১৫ শতাংশ হারে প্রদেয় বিলম্ব ফি এবং প্রযোজ্য মুসকসহ অন্যান্য ফি গত জুনের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধের জন্য পুনরায় নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী পিবিটিসেল কর্তৃক সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধের বাধ্যকতা রয়েছে বিধায় বর্ণিত বকেয়া পরিশোধ করা না হলে সিটিসেলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রমে নির্দেশনা জারি করা হলো।
বিষয়টি নিয়ে সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেবুব চৌধুরীর সঙ্গে কয়েক দফায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, এখনও অপারেটরটিকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে বকেয়া পরিশোধ না করলে ফাইনালি বিটিআরসি সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করবে। বিষয়টি নিয়ে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছে বিটিআরসি।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স পেয়ে সিটিসেল ১৯৯৩ সাল থেকে সেবা দিতে শুরু করে। যার ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরের টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা কোম্পানি সিংটেল-এর হাতে। পিবিটিএলের রয়েছে ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফার ইস্ট টেলিকমের হাতে।