Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 9:03 pm

সিটি বাসের ‘প্রাধিকার লেন’ দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে যানজটের কারণে কর্মক্ষম মানুষকে দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় সড়কে থাকতে হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এই পরিস্থিতি উত্তরণে বাসের জন্য আলাদা লেন দাবি করেছে সংগঠনটি। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে সিটি সার্ভিসের বাস পরিষেবা উন্নত করে বাস রুট রেশনালাইজেশন পদ্ধতিতে বাসের জন্য প্রাধিকার লেনের ব্যবস্থা করে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে রিকশা, ইজিবাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন তুলে দিয়ে বৈজ্ঞানিক পন্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ঢাকার যানজট সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। ‘যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা এবং পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করায় ভয়াবহ যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। নগরীর একপ্রান্ত থেকে যে কোনো গন্তব্যে যেতে চার-পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মক্ষম মানুষের ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। বুয়েটের তথ্য বলছে, প্রতিবছর এই যানজটে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা।”

ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাস রংচটা, বিবর্ণ, লক্কড়ঝক্কড়, পেছনের লাইট-ইন্ডিকেটর আর সামনের লুকিং গ্লাস নেই। আসনে দুই পা মেলে বসা যায় না। ‘বাসে ওঠা-নামার পাদানি ও ধরার হ্যান্ডল ভাঙা থাকে। দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যেতে হয়। গরমের দিনে ঘামে ভিজে এবং বর্ষাকালে বাসের ভেতর বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু অবস্থা হয়।’

মোজাম্মেল বলেন, ‘কোনো বাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। ময়লা-আর্বজনা, ছারপোকা, তেলাপোকায় ভরপুর, মুড়ির টিনের মতো বাসে ওঠানামার ভয়াবহ যন্ত্রণা সহ্য করেও সঠিক সময়ে বাস পাওয়া যায় না। অফিস সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। ‘নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, অসুস্থদের জন্য এসব বাসে ওঠানামা এবং ভেতরে গাদাগাদি করে যাতায়াত করা চরম এক নারকীয় অবস্থা। তার ওপর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, চালক শ্রমিকদের দুর্ব্যবহার তো রয়েছেই।”

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, এসব কারণে অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি কিনছেন। অন্যরা মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং, অটোরিকশা, ইজিবাইক ও পাঠাও-উবারের মতো ছোট ছোট যানবাহনের দিকে ঝুঁকছেন। এতে চার লাখ প্যাডেলচালিত রিকশা, ছয় লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, এক লাখ ৩৪ হাজার রাইডশেয়ারিংয়ের ছোট ছোট যানবাহন, ৩০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবাধ যাতায়াতের কারণে নগরীর যানজট ও জনজট চরমভাবে বেড়ে চলেছে।”

ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য ১২টি সুপারিশ তুলে ধরেন মোজাম্মেল হক, যার মধ্যে আছেÑ
১. উন্নত সিটিবাসের ব্যবস্থা করা, বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে বাসের জন্য প্রাধিকার লেনের ব্যবস্থা করা;
২. মোটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহন নিবন্ধন জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করা;
৩. প্রধান প্রধান সড়ক থেকে প্যাডেলচালিত রিকশা, ইজিবাইকসহ ধীরগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করা;
৪. ফুটপাত দখল মুক্ত করা, ফুটপাতে স্বচ্ছন্দে পথচারী যাতায়াতের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে সড়কের মিডিয়ানে উড়াল ফুটপাত তৈরি করা;
৫. ট্রাফিক সিগন্যাল ডিজিটাল করা, উন্নত বিশ্বের মতো ক্যামেরা পদ্ধতির ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম চালু করা। জরিমানার অর্থ পরিবহন মালিক-চালকের ব্যাংক হিসাব থেকে আদায়ের ব্যবস্থা করা;
৬. প্রধান সড়কে, সড়কের বাঁকে পার্কিং, লোডিং, আনলোডিং বন্ধ করা; যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা;
৭. হাত তুলে রাস্তা পারাপার বন্ধ করে জেব্রাক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা;
৮. ডিটিসিএ, ডিএনসিসি ও ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয়ে চার থেকে ছয় সদস্যের একটি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ টিম তৈরি করা, যারা সার্বক্ষণিকভাবে নগরজুড়ে যানজট পরিস্থিতি দেখভাল করে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দেবে;
৯. ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলো যানজটমুক্ত রাখার উপায় বের করা;
১০. মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার যানজটমুক্ত করতে গুলিস্থান পার্ককে অস্থায়ী টার্মিনাল বানানো, কারিগরি দিক বিবেচনা করে রাজধানীতে প্রবেশমুখী র‌্যা¤‹ বাড়ানো;
১১. বৈজ্ঞানিক পন্থায় গবেষণা করে দুই বা তিন লেনের ছোট ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল এক থেকে দুই মিনিট আর তিন বা চার লেনের বড় ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল দুই থেকে তিন মিনিট চালু রাখা;
১২. বাস দাঁড়ালে যানজট হয় নাÑসমীক্ষা চালিয়ে এমন স্কট বিষয় খুঁজে নগরজুড়ে ৩০০ বাস স্টপেজের ব্যবস্থা করা। এসব স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা বাধ্যতামূলক করা। এরই মধ্যে তৈরি বাস-বেগুলোর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।
এবি পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, নাগরিক সংহতির সাধারণ স¤‹াদক শরীফুজ্জামান শরীফ, যাত্রী কল্যাণ সমিতি সহ সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, প্রচার স¤‹াদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।