প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
আমাদের পুঁজিবাজারে যে আর্থিক প্রতিবেদনগুলো আছে, সেগুলো যদি বিশ্বাসযোগ্য হয় তাহলে বাজার অতিমূল্যায়িত নয়। পতন হওয়ার মতো অবস্থায় বাজার যায়নি। তাই এ আতঙ্ক ছিল ভিত্তিহীন। আর ২০১০ বা ১৯৯৬ সালে যে ধস হয়েছিল, সেটি কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হয়নি। ২০১০ সালে বাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ার কারণে পতন হয়েছিল। বাজারে কে কোন শেয়ার কতগুলো কিনেছে, সেটি যদি সবাই জেনে যায় তাহলে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে। ফলে সিডিবিএলের এ দুর্বল দিকটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাক্ষ ড. মোহাম্মদ মুসা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল।
মোহাম্মদ মুসা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা গেছে। পুঁজিবাজার একটি খেলার জায়গা এবং আমরা খেলতে অভ্যস্ত। অর্থমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, এটি জুয়াড়িদের জায়গা। যদিও তিনি এখন মত পরিবর্তন করেছেন। তবে দেশের বাজারে কিছুটা জুয়ার মানসিকতা সব সময়ই আছে। পুঁজিবাজারের এমন পতনের দুটি কারণ হতে পারে। একটি হচ্ছে মুদ্রানীতি এবং এটির ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি থাকা উচিত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক আবার কিছু ব্যাংককে জরিমানাও করেছে। অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও অতিক্রমের কারণে তারা প্রাথমিকভাবে সতর্ক করেছে এবং তারপরও কথা না শোনার কারণে শাস্তি দিয়েছে। তাছাড়া এডিআর (অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও) যদি কমে যায় তাহলে তারল্য কমে যায়। আর তারল্য কমার কারণে পুঁজিবাজারে একটি প্রভাব পড়বে। এডিআর যদি কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ডিপোজিটর বাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যাংকগুলো। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিপোজিট রেট বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে বেড়েও গেছে। আর ডিপোজিট রেট বাড়লে ঋণের সুদও বাড়বে। ফলে ঋণের ওপর সুদের হার বাড়লে তার একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। আমরা বলি যে, মানি মার্কেটে সুদের হার বাড়লে ক্যাপিটাল মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং সুদের হার কমলে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এর চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। যে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন যে, সামনে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হয়তো বাজার কমবে ফলে আমরা আগেই বেরিয়ে যাই। ফলে বাজারে এমন পতন হয়েছে।
মোহাম্মদ হেলাল বলেন, গত রোববার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে সূচক পাঁচ হাজার ৮৮৫ পয়েন্ট ছিল সেটি ১০টা ৫০ মিনিটে পাঁচ হাজার ৭৭৪ পয়েন্ট হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ ১০ মিনিটের ব্যবধানে ১১১ পয়েন্ট পতন হয়েছে। অনিশ্চয়তার কারণেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে করি। আর মানুষ যখন আতঙ্কিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তার ৯৯ শতাংশই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের পুঁজিবাজারে যে আর্থিক প্রতিবেদনগুলো আছে সেগুলো যদি মোটামুটিভাবে বিশ্বাস করি তাহলে এটি অতিমূল্যায়িত বাজার নয়। পতন হওয়ার মতো কোনো জায়গায় তো বাজার যায়নি তাহলে আতঙ্কিত হতে হবে কেন? পুঁজিবাজারের এমন অবস্থায় অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছে আবার ২০১০ হবে কি না? ২০১০ বা ১৯৯৬ সালে বাজারে যে ধস হয়েছিল, সেটি কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হয়নি। ২০১০ সালে বাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ার কারণে পতন হয়েছিল। তিনি বলেন, বাজারে কে কোন শেয়ার কতগুলো কিনেছে, সেটি সবাই যদি জেনে যায় তাহলে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে। ফলে সিডিবিএলের এ দুর্বল দিকটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম