নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে দেশের ১০ হাজার ঘরবাড়ি ও ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘শুকরিয়া, এটা ঘূর্ণিঝড় পর্যন্ত ছিল, কোনো সুপার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়নি। বাতাসের গতিবেগ ৮০ কিলোমিটারের ওপরে যায়নি।’
ঘূর্ণিঝড়টি ভোলা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৪১৯ ইউনিয়নের ১০ হাজার ঘরবাড়ি এবং ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এক হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে ঘর মেরামতের জন্য টিন দেয়া হবে। আর যাদের মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা সুদমুক্ত ঋণ পাবেন। ঘূর্ণিঝড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মোট নয়জনের মৃত্যুর তথ্য দেন প্রতিমন্ত্রী, যদিও স্থানীয় কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য হিসাব করলে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়।
দুর্যোগে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
ভারী বর্ষণ আর জলোচ্ছ্বাস নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ভোলার কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। সে সময় দমকা হওয়ায় গাছ ভেঙে পড়ে এবং দক্ষিণের বহু জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে যায়। সোমবার সকালেই আবহাওয়া অফিস বিপদ সংকেত জারি করায় উপকূলীয় জেলাগুলোয় মাইকিং করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছিল।
এনামুর রহমান জানান, দেশের ছয় হাজার ৯২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০ লাখ লোক আশ্রয় নিয়েছিলেন ঝড়ের সময়। ঝড় কেটে যাওয়ার পর তারা সবাই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কিছু স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, তবে এখন স্বাভাবিক হয়েছে।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঝড়ে বিভিন্ন বিতরণ সংস্থার প্রায় দুই হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের চার কোটি ৮০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৮০ লাখ গ্রাহক এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন। বিকালের মধ্যে এর ৭০ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে বলে আশা করছি।
দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি বাড়ছে। হাসপাতালসহ জরুরি সেবা বিঘিœত হচ্ছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারেট যোগাযোগে বিভ্রাটও কাটেনি।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এরশাদ হোসাইন জানিয়েছেন, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন সড়কে ২৮৭টি গাছ ভেঙে পড়ার তথ্য তারা পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন সড়কে ৫৬টি গাছ উপড়ে পড়েছে। তিনটি ঘটনায় গাছ পড়েছে বাসাবাড়ির ওপর। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সেসব গাছ সরিয়ে ফেলেছেন।