শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও হাউস স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি গত সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশটির ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণসীমা নিয়ে একমত হতে পারেননি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে একমত না হলে দেশটি ঋণ খেলাপি হয়ে যেতে পারে এবং দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে। খবর: রয়টার্স।
ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান স্পিকারের বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। তবে তারা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। ম্যাককার্থি চাইছেন, হোয়াইট হাউস কেন্দ্রীয় বাজেট কমাতে রাজি হোক। ওদিকে বাইডেন মনে করছেন, ম্যাককার্থি এ ক্ষেত্রে ‘কট্টরপন্থি’। একই সঙ্গে বাইডেন নতুন করারোপের প্রস্তাব দিয়েছেন, যার সঙ্গে আবার ম্যাককার্থি একমত নন। সে কারণেই এ অচলাবস্থা।
বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার রাতেও ক্যাপিটাল হিলে আলোচনা আবার
শুরু হয়।
বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঋণখেলাপি হওয়ার বিষয়টি চিন্তার মধ্যেই নেই। এখন অগ্রসর হওয়ার একটাই পথ, সেটা হলো, দ্বিপক্ষীয় ঐকমত্যের দিকে অগ্রসর হওয়া।
বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের এক ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের ম্যাককার্থি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এখনও আমরা ঐকমত্যে আসতে পারি। কিন্তু বাজেট-ঘাটতি হ্রাসে বাইডেনের পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি একমত নন। বাইডেন চাইছেন, ধনীদের কর বাড়িয়ে এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি দেয়ার পথ বন্ধ করে ঘাটতি দূর করতে। কিন্তু ম্যাককার্থি তাতে রাজি নন, তিনি ২০২৪ সালের ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় বাজেটের ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি প্যাট্রিক ম্যাকহেনরি জানিয়েছেন, ঋণের সীমা বৃদ্ধি করতে বাজেট-বিষয়ক আংশিক ঐকমত্য হবে, এমন সম্ভাবনা নেই। চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো বিষয়ে একমত হবে না। বৈঠকের আবহ ইতিবাচক ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধির যেকোনো সিদ্ধান্ত সংসদের উভয় কক্ষে পাস হতে হবে। কিন্তু হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে আর সিনেট ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে। উভয়ের হাতে ১ জুন পর্যন্ত সময় রয়েছে।
বৈশ্বিক আর্থিক খাতের ভিত্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ড। দেশটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঠিক কী হবে, তা বলা কঠিন। যদিও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা আশঙ্কা করছেন, সে রকম পরিস্থিতিতে বিশ্বের ইকুইটি, ঋণ ও অন্যান্য বাজারে ব্যাপক টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
ওয়াল স্ট্রিটের নির্বাহীরা সতর্ক করেছেন, ট্রেজারি বাজার ঠিকঠাক কাজ না করলে তার প্রভাব দ্রুত ডেরিভেটিভ, মর্টগেজ ও পণ্যবাজারে ছড়িয়ে পড়বে। কারণ বাণিজ্য ও ঋণ সুরক্ষিত রাখতে যেসব ট্রেজারি জামানত হিসেবে ব্যবহƒত হয়, বিনিয়োগকারীরা সেগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। যেসব বন্ডের ঋণের কিস্তি বকেয়া পড়েছে, ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেগুলোর বদলে অন্য জামানত দিতে বলা হতে পারে।
মুডিস অ্যানালিটিকস বলেছে, ঋণের সীমা লঙ্ঘিত হলে স্বল্পমেয়াদি তহবিল বাজারেও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত খেলাপি হবে। বিনিয়োগ ব্যাংক প্যানমিউর গর্ডনের প্রধান অর্থনীতিবিদ সাইমন ফ্রেঞ্চ বলেন, শেষমেশ যুক্তরাষ্ট্র যদি খেলাপি হয়, তাহলে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট অনেকটা টি পার্টির মতো হয়ে যাবে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের কথা মাথায় রেখে তিনি এ কথা বলেন।