Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:33 pm

সিন্ডিকেটের কারণে ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বড় রাইস মিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে মনে করে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ধানের ন্যায্যমূল্য পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আট দফা দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম বলেন, ২০০৫ সাল থেকে ব্যাপকভাবে অটো রাইস মিল সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে উৎসাহী হয়ে এর চাষ বাড়িয়ে দেন। কারণ তাদের উৎপাদিত ধান তখন মিল মালিকরা ন্যায্যমূল্যে কিনে নিতেন। সেই ধারাবাহিকতায় গত ১০-১২ বছর ধানের মূল্য স্থিতিশীল ছিল।
তবে দেশের শিডিউলড ব্যাংকগুলো কিছু সংখ্যক অটো রাইস মিল মালিককে ২০ কোটি থেকে দুই হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত চলতি মূলধন দেয়। অন্যদিকে শতকরা ৯০ ভাগ অটো রাইস মিল মালিককে দেয় ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত। এতে আর্থিকভাবে বড় বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি কিছু বড় গ্রুপ অটো রাইস মিল ব্যবসায় আসায় ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন পাওয়া মিলগুলোর মধ্যে ৬০-৭০ শতাংশই বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে মূলধন না থাকায় এবং অন্যদিকে বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে ওইসব মিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে একেএম খোরশেদ আলম বলেন, আমরা দেখেছি সম্প্রতি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে এবং একজন শ্রমিকের মজুরি এক হাজার টাকা হওয়ায় কৃষক পাকা ধানক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি বলেন, আমরা ৬৮ হাজার গ্রামের কৃষক ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অটো রাইস মিল মালিকরা একে অপরের সম্পূরক। ধান চাষ না হলে অটো রাইস মিল যেমন টিকে থাকবে না, তেমনই অটো রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকেরা ধান বিক্রি করার ক্ষেত্র খুঁজে পাবেন না।
সেজন্য ধানের ন্যায্যমূল্য পেতে সরকারের কাছে আট দফা দাবি তুলে ধরেন খোরশেদ আলম। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী টিমের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষক শনাক্ত করা, শতকরা দুই শতাংশ হারে কৃষিঋণ বিতরণ করা, কৃষি যান্ত্রিক উপকরণ কৃষি সমবায় সমিতির মাধ্যমে পাঁচ থেকে সাত বছর মেয়াদি বিনা সুদে ব্যাংকের মাধ্যমে সরবরাহ করা, সেচের বিদ্যুৎ বিল ইউনিটপ্রতি তিন-চার টাকা নির্ধারণ করা, বন্ধ অটো রাইস মিলগুলো ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করে রিশিডিউলের মাধ্যমে ২৫ থেকে ১০০ কোটি টাকা চলতি মূলধন দেওয়া, সুদের হার কৃষিশিল্প হিসেবে চার-পাঁচ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা, বিদ্যুৎ বিল কৃষিশিল্প হিসেবে চার থেকে পাঁচ টাকা ইউনিট নির্ধারণ করা এবং বিদেশ থেকে আপাতত চাল আমদানির ওপর শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা।
রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মনে করেন, উপরোক্ত দাবিগুলো শতভাগ পূরণ হলে চালের বাজারে ধানের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে, কৃষক তার উৎপাদিত ধান বিক্রির ক্ষেত্র খুঁজে পাবে এবং ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে না।