নিজস্ব প্রতিবেদক: কেবল প্রবৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে উন্নয়নের হিসাব করলে তা পূর্ণাঙ্গ হয় না বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটি জানায়, প্রবৃদ্ধির হার নয় বরং অর্থনীতিতে কাঠামোগত কি পরিবর্তন আসছে ও কতটা কর্মসংস্থান হচ্ছেÑসেসব বিষয় বিচার করে উন্নয়নের হিসাব কষা উচিত। আর সামষ্টিক অর্থনীতির নানা দিক বিশ্লেষণে যেসব তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন হয়, সেগুলোর অভিগম্যতা কমে যাচ্ছে বলে মনে করে সিপিডি।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল চলতি অর্থবছরের অর্থনীতির ওপর তৃতীয় মূল্যায়নে এ কথা জানানো হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ইন ফিন্যান্সিয়াল ইয়ার ২০১৬-১৭: থার্ড রিডিং’ শীর্ষক মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনীতির উন্নয়ন অতিমাত্রায় প্রবৃদ্ধিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে। একদিকে দেখানো হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু সে অনুপাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে পরিমাণ তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানি হচ্ছে, সে অনুসারে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তার মতে, এটি অর্থনীতির অত্যন্ত খণ্ডিত ও অসম্পূর্ণ চিত্র। সবচেয়ে দুস্থ মানুষটি দেশের উন্নয়ন থেকে কী পেল, সেটা বিবেচ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধিনির্ভর বিতর্ক অনেক ক্ষেত্রে অবান্তর। পুরো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি চালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় খাতের বিনিয়োগ ও ভোগ দিয়ে। ব্যক্তি খাতের অবদান ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। অথচ এ দেশের বিনিয়োগকারীরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে অর্থ বিনিয়োগের জন্য অনুমতি চাচ্ছেন। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশের চেয়ে ওইসব দেশে তাদের পুঁজিকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন। তিনি বলেন, একটি পুঁজি দুর্ভিক্ষের দেশ এখন পুঁজি রফতানির দেশে পরিণত হতে চাচ্ছে। দেশে বিলাসী পণ্যের ভোগ বাড়ছে। এর উদাহরণ, বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারে এশিয়ায় পঞ্চম বাংলাদেশ।
মূল প্রতিবেদনে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এবারের হাওরের দুর্যোগে বোরো উৎপাদন কম হবে ১৬ লাখ টন। বর্তমানে খাদ্যের মজুত পরিস্থিতিও সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তাই সরকারের বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এখন প্রয়োজন আমন ধানের উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়া। বিবিএসের হিসাবে দেশে বিনিয়োগ বাড়লেও সেটি হয়েছে সরকারি বিনিয়োগ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন গত তিন বছরের তুলনায় বেড়েছে কিন্তু বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের হার ২০১২ সালের পর সর্বনিম্ন লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন, একদিকে জনশক্তি রফতানি বাড়ছে অন্যদিকে রেমিট্যান্স কমছে। অর্থাৎ হুন্ডি, ডিজিটাল হুন্ডি বেড়েছে। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে এর প্রকৃত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে জমির দাম বেশি বলা হলেও আমরা দেখেছি যে জমি ছাড়া অন্যান্য খাতেও ব্যয় বেশি। তাছাড়া টেন্ডার দেওয়ার পরও ব্যয় বাড়িয়ে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকের পরিচালকরা যখন বৃহৎ ঋণ গ্রহণকারী হয়ে ওঠেন তখন বিষয়টি চিন্তার। সরকার জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগে যখন ইসলামী ব্যাংকে সংস্কারের কথা বলেছিলো তখন আমরা অনেকেই স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের ঋণখেলাপি পরিস্থিতিসহ অন্যান্য মানের দিক থেকে ভালো ছিল। ইসলামী ব্যাংকের চলমান ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ভূমিকা থাকা দরকার, তা দেখা যাচ্ছে না।
Add Comment