নিজস্ব প্রতিবেদক: জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারিকে পূর্বঘোষণা ছাড়া কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে সিলেট গ্যাসফিল্ড। এতে সিভিওর সঙ্গে করা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (সিজিএফএল)। সিভিওর নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ তথ্য জানায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মতে, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিজিএফএল কঁাঁচামাল সরবরাহ বন্ধের কারণে সিভিওর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি এখনও মামলাধীন। সিজিএফএল একমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাসের কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৭ জুলাই কোম্পানিটি কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতেসিজিএফএল চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।
এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কোম্পানিটি উচ্চ আদালতে একটি রিট করে। আদালত সিভিওর নামে গত বছরের ১০ জুন বরাদ্দ কনডেনসেটের বাকি অংশ সরবরাহ করার নির্দেশ দেন সিজিএফএলকে। আদেশ জারির পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ সরবরাহ শুরু করার কথা বলা হয় আদালতের নির্দেশনায়।
কিন্তু সিজিএফএল আদালতে একটি সিভিল পিটিশন দায়ের করে এবং উচ্চ আদালত কিছুদিনের জন্য বিষয়টি স্থগিত করে। হাইকোর্টের আরেকটি বিভাগ গত ৮ সেপ্টেম্বর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। এ সময়ের মধ্যে হাইকোর্টে ছুটি ছিল।
সিজিএফএলের কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধের কারণে গত ১৭ জুলাই থেকে সিভিওর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটি আশা করছে আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দ্রুত আবার উৎপাদন শুরু করবে।
উল্লেখ্য, ২০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত হিসাববছরের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে সাত টাকা ৪০ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা। আগের বছরে একই সময় ছিল যথাক্রমে সাত টাকা ৩৩ পয়সা এবং ১৪ টাকা ৫৯ পয়সা।
২০১৫ সালের সমাপ্ত হিসাববছরে ১৫ শতাংশ নগদ ও ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে, যা আগের বছর থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি। ওই বছর কোম্পানিটি কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল ১৮ কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা, যা আগের বছর লোকসান ছিল ছয় কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
গতকাল কোম্পানিটির এক কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। দিনজুড়ে ৮৬ হাজার ৪১টি শেয়ার মোট ৯৩৯ বার হাতবদল হয়। শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের চেয়ে এক দশমিক ১১ শতাংশ বা দুই টাকা ১০ পয়সা বেড়ে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ১৯২ টাকায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দর ছিল ১৯২ টাকা ৬০ পয়সা। শেয়ারদর সর্বনি¤œ ১৯১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১৯৪ টাকা ৫০ পয়সায় হাতবদল হয়। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৮৫ টাকা থেকে ৩৫৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ২৮ পয়সা। এটি আগের বছরের একই সময়ে ছিল দুই টাকা ৪৯ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে এনএভি ছিল ২০ টাকা ২৩ পয়সা। এটি চলতি বছরে ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ২০ টাকা ৫০ পয়সা। ১৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ২৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ সাত কোটি ৬১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট দুই কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার রয়েছে। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এক দশমিক ৪৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার।