অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: লাভজনক ও ফলন ভালো হওয়ায় সিরাজগঞ্জের চারটি উপজেলায় বেড়েছে কার্পাস তুলার চাষ। চলতি মৌসুমে সরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ে ৫০০ হেক্টর জমিতে অন্তত এক হাজার ৪০০ কৃষক তুলা চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এতে তুলা চাষে অনেকেই ভাগ্য বদল হওয়ায় ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন তুলাসংশ্লিষ্টরা।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলায় গত বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৬০ মেট্রিক টন। এবার চাষ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টনে, যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। এ হারে কৃষকের আয় হবে মোট মূল্যের ৭০ শতাংশ। এ মৌসুমে জেলার সদর, রায়গঞ্জ, কামারখন্দ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় এ কার্পাস তুলা চাষ হচ্ছে। বতর্মানে জেলার চার উপজেলার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা তুলা চাষ করছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। প্রথমে তুলা চাষে আগ্রহ কম থাকলেও এখন চাষ বেড়েছে।
রায়গঞ্জ উপজেলার বারইভাগ এলাকার তুলা চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে এক বিঘা জমিতে তুলা চাষে খরচ হয়েছিল পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। অন্যদিকে উৎপাদিত তুলা বিক্রি হয়েছিল ৪০ হাজার টাকায়। এবার আমি দুই বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৯০ টাকা। তবে এবার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি এক লাখ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার তুলা বিক্রি করতে পারব।
সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের তুলাচাষি মোকাদ্দেস ইসলাম বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে কার্পাস তুলা চাষে খরচ কয়েকগুণ কম। আমি সরকারিভাবে বীজ, সার ও ওষুধ পেয়ে চলতি মৌসুমে ৩৫ শতক জমিতে কার্পাস তুলা চাষ করেছি।
কামারখন্দের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের (কটন ইউনিট অফিসার) উজ্জ্বল চন্দ্র বলেন, উৎপাদিত তুলা বাজারজাতকরণে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা তুলা উৎপাদনে আগ্রহ দেখাতেন না। উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় তুলা চাষে প্রণোদনাসহ উৎপাদিত তুলা বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা দেয় সরকার। একই সঙ্গে প্রণোদনা হিসেবে সরকারিভাবে বীজ, সার ও ওষুধ বিতরণ করা হয় এবং উৎপাদিত তুলা ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রির নিশ্চয়তা দেওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে প্রান্তিক কৃষকের চিন্তাধারা।
অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম হওয়ায় কার্পাস তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। আগামীতে তুলা চাষে এ এলাকার কৃষকের সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-সহকারী) কৃষি কর্মকর্তা শামিনুর ইসলাম শামীম বলেন, খাদ্যের পরই বস্ত্রের স্থান। আর এ বস্ত্রের ৭০ ভাগ আসে তুলা থেকে। তুলা একটি লাভজনক ফসল। দিন দিন এই এলাকায় তুলার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।