সিরাজগঞ্জে প্রস্তুত ৪ লাখ কোরবানির পশু

প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ : ঈদুল আজহা ঈদ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় কোরবানির জন্য খামারে মোটাতাজা করা হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ গবাদি পশু। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭১২টি এবং ১ লাখ ৫৫ হাজারের মতো ছাগল। এছাড়া বাকি পশুর মধ্যে রয়েছে মহিষ ও ভেড়া।

বাড়তি লাভের আশায় খামারের পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে পশুর বাড়তি যতœ আর লালন পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ও প্রান্তিক কৃষকেরা। জেলার চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন হাটের চাহিদা পূরণ করে এখানকার গবাদি পশু।

এদিকে, দফায় দফায় বেড়েই চলছে গো-খাদ্যের দাম। খামারিদের এখন প্রতিদিন গো-খাদ্যে খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। ন্যায্য মূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের লোকসান গুনতে হবে। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে কোরবানির পশুর দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ১৭ হাজার ছোট বড় খামারি বিভিন্ন প্রজাতির গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা মোটাতাজা করেছে। এতে খামারে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯৬টি গবাদিপশু মোটাতাজা করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ১ লাখ ৭১ হাজার ৭১২টি, মহিষ ১ হাজার ৪০৫টি, ছাগল ১ লাখ ৫৫ হাজার ও ভেড়া ৬১ হাজার ১৩৩টি। এ জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ১ লাখ ৬০ হাজার। এই চাহিদা মিটিয়ে ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৯৬টি পশু সারাদেশে চলে যাবে। এসব পশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবার যাতে ব্যবহার না করে এজন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মোটাতাজা করা পশু ক্রয়-বিক্রয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

সদর উপজেলার কালিয়া কান্দাপাড়ায় অবস্থিত তালুকদার ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার শফিউর রহমান জানান, এ বছর কোরবানির জন্য ৪৫টি ষাড় প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে তাদের এবার বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

সদর উপজেলার খামারি সুজন বলেন, এ বছর বিক্রির জন্য ৬টি ষাড় প্রস্তুত করেছি। গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে আছি। যে পরিমাণ গরুগুলোকে খাওয়ানো হচ্ছে তাতে সঠিক দাম পাবো কি না এ নিয়ে বড় চিন্তায় আছি।

সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউপিতে অবস্থিত আরাভ এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান সিহাব জানান, তাদের খামারে দেশি-বিদেশি মিলে শতাধিক ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, দুম্বা মোটাতাজা করা হয়েছে। তাদের খামারে লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা দামের পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। যার বেশিরভাগ পশু খামার থেকেই বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া তারা সারা বছরই পশু মোটাতাজা করে বিক্রি করে থাকেন।

শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান জানান, এ উপজেলায় গো-খামারের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। যারা প্রকৃত খামারিদের গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উন্নতমানের ঘাসের আবাদ করতে হবে। এতে গো-খাদ্যের খরচ বেশ কমে যাবে। পাশাপাশি ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যেসব খামারি শুধু ভুসি, খৈল, খড়ের মতো গো-খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল তাদের গরু পালন করে এবারে লাভবান হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হবে।

জেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী তালগাছী হাটের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনও কোরবানির হাট জমেনি। বাইরের ব্যাপারীও তেমন আসছে না। কোরবানির ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে মানুষ গরু ক্রয় করে বেশি। এখনও হাট জমে উঠেনি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার জানান, প্রতিটি উপজেলার খামার পরিদর্শন করে খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ ওষুধপত্র দিচ্ছি। এবার জেলায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মোটাতাজা করা পশু ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আমরা আশা করছি।

ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোক থাকবে। গবাদিপশু ক্রেতা এবং বিক্রেতারা যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিং লেনদেন সেবা গ্রহণ করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, জেলায় ৩১টি স্থায়ী ও ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের মাধ্যমে এসব গবাদি পশু বিক্রি করা হবে। এছাড়া উপজেলা

প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে পশুর ছবি আপলোড করে অনলাইনেও বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০