সিরাজগঞ্জে ম-ম গন্ধে মুখরিত সরিষার মাঠ

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ : শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো সরষের হলুদ ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের দিগন্তজোড়া মাঠ। এ বছর জেলার বিস্তীর্ণ মাঠগুলোতে ব্যাপক সরষে চাষ হয়েছে। সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই মনে হচ্ছে সরষে ফুলের হলুদ আচ্ছাদনে ঢেকে আছে চারদিক। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃশ্য। দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ সাজে।

চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরষের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরষে চাষের উপযোগী থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। এ মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।

চারদিকে সরষে ফুলের ম-ম গন্ধে মুখরিত ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠগুলো। সবুজ শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এ দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। সবুজ, সোনালি ও হলুদে সাজে ফসলের মাঠ। এমনি ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরষে ফুলের চাদরে ঢাকা পড়েছে ফসলের মাঠ।

গত ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ৫৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা সরিষা চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ মৌসুমে সরিষা চাষের জমির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় সবোচ্চ ২০ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সর্বনি¤œ চৌহালী উপজেলা ২৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮২০ হেক্টর, কাজীপুরে ১ হাজার ২২৫ হেক্টর, রায়গঞ্জে ৬ হাজার ৭৪৫ হেক্টর, তাড়াশে ৬ হাজার ২০ হেক্টর, শাহজাদপুরে ১৪ হাজার ৫০ হেক্টর, বেলকুচিতে ৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর, কামারখন্দে ২ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।

তবে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হলেও টরি-৭, বারি-১৪, বীনা-৯, বীনা-১৪ জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এবার ইউরিক অ্যাসিডমুক্ত ক্যালানিয়া জাতের সরিষা চাষ হয়েছে অনেক জায়গায়। যা চাষাবাদে সময় লাগে ৮৫ থেকে ৯০ দিন। যেখানে অন্যান্য জাতের সরিষা চাষাবাদে সময় লাগে প্রায় ১২০ দিনের মতো। কৃষকেরা এ জাতের সরিষা চাষ করে প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় দেড় থেকে দুইগুণ বেশি আয় করতে পারবেন। এ সরিষার তেল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

এ মৌসুমে সরিষা চাষের প্রণোদনা হিসাবে জেলায় ৩৫ হাজার ২০০ জন কৃষকদের মাঝে বিঘা প্রতি ১ কেজি বিজ, ২০ কেজি ডিএসপি এবং ১ কেজি এমওপি সার প্রদান করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।

সদর উপজেলার খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াগাতী গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ৩ বিঘা জমিতে আমি সরিষা আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৪-৫ মণ করে সরিষা পাব বলো আশা করছি।

উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া গ্রামের কৃষক বেল্লাল হোসেন বলেন,  ৬ বিঘা জমিতে সরিষা আবার করেছি। সার্বক্ষণিক পরিচর্যার ফলে সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় ২৫-২৬ মণ সরিষা পাওয়ার আশা করছি। কাটা ও মাড়াই করা দিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হবে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৯০ হাজারের বেশি।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়ামিন সুমী বলেন, সারা বাংলাদেশের মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লাপাড়ায় সরিষার আবাদ সবোচ্চ। আমরা সরিষা আবাদ সম্প্রসারণে কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা এবং বিভিন্ন প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি। যেহেতু ভোজ্যতেলের ওপর আমাদের আমদানির নির্ভরতা কমাতে হবে। এ জন্য আমরা সরিষার আবাদ যাতে বেশি হয়, তার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং কৃষি মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ৩ বছরে ভোজ্যতেলের ৪০% বাড়াতে হবে। সে হিসাবে এ জেলায় গত বছরের চাইতে ৮ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে। এছাড়া সরিষার ফলন যেন আরও ১৫% বৃদ্ধি পায় সেই কারণে সরিষার জমিতে মৌ-বক্স বসানো হয়েছে। যার ফলে সরিষার ফলন ১৫ থেকে ২০% বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরিষার জমি থেকে আমরা খাঁটি মধু উৎপাদন করতে পারব।

এ বছর জেলায় মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫০ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত মধু উৎপাদন হয়েছে ৮০ মেট্রিক টন। আশা করছি বাকি সময়ের মধ্যে আমাদের মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে বলে তিনি জানান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০