সিরাজগঞ্জ বিসিকে কর্মসংস্থান হবে দুই লাখ মানুষের

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ ‘বিসিক শিল্পপার্ক’ নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশে ৪০০ একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠছে এ শিল্পপার্ক। জমি অধিগ্রহণ শেষে এরই মধ্যে শিল্পপার্কটির মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে স্থাপনা নির্মাণের জোর প্রস্তুতি। ৭১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ শিল্পপার্কের ৪৮৭টি প্লটে চার শতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এতে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন।

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার সায়দাবাদ ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলী, পূর্ব মোহনপুর, বনবাড়িয়া, বেলটিয়া ও মোড়গ্রাম মৌজায় বিশাল এলাকা একসময় যমুনা নদীর ভাঙনে বিপর্যস্ত ছিল। এখানে ৪০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পপার্ক নির্মাণ শুরু করেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড বিভাগ এ প্রকল্পে বালি ভরাটের কাজ করছে, যা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

জানা গেছে, এ শিল্পপার্কে ৪০০টির মতো ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এখানে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বাড়ি থেকে মানুষ এ শিল্পপার্কে কাজ করে জীবনজীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাবে।

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এ শিল্পপার্কের পাশে রয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুৎসুবিধা। এখানে ননস্টপ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। অবকাঠামোগত সুবিধার পাশাপাশি এখান থেকে অল্প খরচে সরাসরি জল, স্থল ও রেলপথে উৎপাদিত পণ্য সহজে রপ্তানি করা যাবে সারাবিশ্বে। এরই মধ্যে প্রকল্পের বালি ভরাট শেষে এখন চলছে ভৌত অবকাঠামোর নির্মাণকাজ। প্রকল্পের বাউন্ডারি ওয়াল ও প্রকল্পের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণকাজ চলছে দ্রুতগতিতে। একই সঙ্গে এখানে দৃষ্টিনন্দন লেক ও সবুজ বনায়ন করা হবে। এখানে নির্মিত শিল্পকারখানা থেকে দেশীয় কাঁচাপণ্য ও উৎপাদনমুখী শিল্প কাঁচাপণ্য তৈরিতে জোর দেয়া হবে। আগামী জুনের মধ্যে শিল্পোদ্যোক্তাদের মাঝে শিল্পপার্কের প্লট হস্তান্তর করা হবে।

এখন প্রকল্পের মাটি ভরাটকাজ শেষ হয়েছে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় শিল্পপার্ক। এখানে শুধু লোকাল নয়, বিদেশি বিনিয়োগও হবে। আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগের মতো তেমন জায়গা রেডি নেই। এখানে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। এখানে সড়ক, রেল ও নৌপথের সুবিধা থাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্পপার্কটি চালু করা হলে প্রায় দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এখানে।

বিসিক সূত্রে আরও জানা যায়, শিল্পপার্কটিতে পরিবেশের বিষয় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। শিল্পকারখানা থেকে উদ্ভূত বর্জ্য যাতে পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি শিল্পকারখানায় বাধ্যতামূলকভাবে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প (ইটিপি) নির্মাণ করতে হবে। তবে ইটিপিগুলো কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পের (সিইটিপি) সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। তরলজাতীয় বর্জ্য পদার্থের জন্য সিইটিপি নির্মাণ করা হবে এবং কঠিন বর্জ্য পদার্থের জন্য থাকবে ডাম্পিং ইয়ার্ড। প্রকল্পে ১০ একর জায়গাজুড়ে লেক নির্মাণ করা হবে। থাকবে সবুজ বেষ্টনী। এছাড়া পার্কটিতে থাকবে পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশাসনিক জোন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ । এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক জীবনেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের এজিএম সাজিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ শিল্পপার্কটি চালু হলে এখানে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং লক্ষাধিক পরিবার সুবিধা পাবে। মাটি ভরাটের কাজ শেষ হওয়ার পর এখন বাউন্ডারি ওয়াল ও ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। এভাবে কাজ এগোতে থাকলে আগামী বছর আমরা প্লট হস্তান্তর করতে পারব। এখানে আমরা শিল্পপার্ক গড়তে পারব। এর মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের মানুষের নিজের জীবিকানির্বাহ করতে পারবেন। সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে এটি উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০