বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশের আবহাওয়া অনবরত বদলে যাচ্ছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে নানারকম ফসলের সময়মতো উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের কৃষির গতি-প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে মারাত্মকভাবে। অসময়ে টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হলে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ বড় বিপদে পড়েন।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের পাঁচটি উপজেলা। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। এবার সবচেয়ে বেশি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। এসব উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এবার নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সিলেট নগরবাসীর মধ্যে। এরই মধ্যে সিলেট নগরের তালতলা এলাকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কার্যালয়ে পানি উঠেছে। বন্যাপরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের পাশে থাকার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ‘দুর্গত অঞ্চল’ ঘোষিত হওয়ার মতো অবস্থা না হলেও সিলেটের মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার প্রভৃতি নিয়ে বিপাকে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় অসময়ের বন্যা কম গুরুত্ব পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোনোভাবে এটি এড়িয়ে গেলে বন্যার শিকার হওয়া এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসবা প্রতিষ্ঠান ও মাঠে-প্রান্তরে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। পানি জমে থাকলে বাস্তাঘাটেরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।
ভেঙে যাওয়া বাঁধসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বাঁধ ভাঙার খবর প্রচার করেছে। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য মসজিদের মাইকে বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত চেষ্টায় কতটা সতর্ক থাকা যায়! এ অবস্থায় জরুরি ওষুধ, খাদ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও সরকারি ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো দরকার। স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে।
মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি প্রভৃতি খবরে যাতে ঢল ও বন্যার প্রকৃত তথ্য চাপা পড়ে না যায়, সেজন্য বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রকে প্রতিনিয়ত তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। সরকারের উচিত হবে, অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল-কলেজ, সড়ক অবকাঠামো সংস্কার করা। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেগুলো নতুন করে তৈরি করতে হবে, সেগুলোকে আগে চিহ্নিত করা। এমন বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো এখনও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে, সেখানে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। সুতরাং এখন আশু চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃতি মূল্যায়ন করা, অবকাঠামোগত উন্নয়নে যেন বৈষম্য না থাকে। যদি কর্তৃপক্ষের নিবিড় নজরদারি না থাকে, তাহলে অপচয় ও দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটতে পারে।