সিলেটে বাসের পর এবার সব ধরনের পরিবহনে ধর্মঘটের ডাক

প্রতিনিধি,সিলেট: সিলেটে বাসের পর এবার সব ধরনের পরিবহনে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন আগামীকাল শনিবার দিনব্যাপী এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিলেট জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের বিভাগীয় সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম।

এর আগে সিলেট বিভাগের বাকি তিন জেলা হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জেও পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। গত বুধবার রাতে জেলা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতিও একই দিন ধর্মঘট ডাকার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে।

বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে সুনামগঞ্জে দুদিন বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বাস মালিক সমিতি। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে। গতকাল দুপুরে হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা বাস মালিক সমিতি (মোটর মালিক গ্রুপ)।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা বলেন, জেলা প্রশাসন কর্তৃক বাস চলাচলে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট পালন করবেন। তাদের দাবি, প্রশাসন নবীগঞ্জ উপজেলার সালামতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গতকাল তাদের কয়েকটি বাস চলাচলে বাধা দিয়েছে। এর প্রতিবাদে তারা মালিক-শ্রমিক মিলে ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘সিলেটের গণসমাবেশের সঙ্গে আমাদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রশাসনের অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এ ধর্মঘট।’

জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সজীব আলী বলেন, হবিগঞ্জের লোকাল রুটগুলোতে একের পর এক বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক ও মালিকদের রুটি-রুজি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নবীগঞ্জের সালামতপুর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ অবৈধ যানবাহন ঠিকই চলাচল করছে। এর প্রতিবাদেই তারা মালিক-শ্রমিকেরা মিলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।

এদিকে শনিবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে। ওই দিনই সব ধরনের পরিবহনে ধর্মঘট ডাকার পেছনে সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাদের। বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত হতে যাতে বিড়ম্বনায় পড়েন, সে জন্যই এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে দাবি তাদের। এর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির গণসমাবেশের আগে এভাবেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল।

সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, চার দফা দাবিতে তারা ধর্মঘট ডেকেছেন। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট জেলায় তাদের ধর্মঘট চলবে। দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল দুপুরে সংগঠনটি নগরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বর এলাকায় এক বৈঠকে বসে। দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে ধর্মঘট ডাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চার দফা দাবিগুলো হলো- সিলেটের সব কটি পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান, সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন রেজিস্ট্রেশন প্রদান, সিলেটের লামাকাজী ও শ্যাওলা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ এবং হাইওয়েতে টমটম ও নসিমন চলাচল বন্ধ করা।

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীন সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি দেশব্যাপী ধারাবাহিক গণসমাবেশ করছে। প্রথম গণসমাবেশ হয় গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে। এরপর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরের পর আগামী শনিবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে।

জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, সরকার নানাভাবে বিএনপির গণসমাবেশ আয়োজনে বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের ইন্ধনে এসব পরিবহন ধর্মঘট দেয়া হয়েছে। তবে এসব বাধাবিপত্তি ঠেলে গণসমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০