অর্ঘ্য চন্দ, সিকৃবি: গৌরবের ১৬ পেরিয়ে ১৭ বছরে পা দিয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সিকৃবি ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑকেক কাটা, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব কোণে অবস্থিত হাওর, সমতল ভূমি ও টিলাবেষ্টিত সিলেট বিভাগে কৃষি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর বিলুপ্ত সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে একটি অনুষদে রূপান্তর করে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’। শুরুতে তিনটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা করলেও পর্যায়ক্রমে ছয়টি অনুষদ চালু হয়। এসব অনুষদের মাধ্যমে কৃষিবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমাণ বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও গবেষণা কার্য পরিচালনা করা হয়।
সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় সাত কিমি উত্তর-পূর্বে টিলাবেষ্টিত ৫০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদীয় ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও আবাসিক ভবন ছাড়াও নির্মাণাধীন রয়েছে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামসহ আরও উন্নয়ন প্রকল্প। তামাবিল বাইপাস রাস্তার উত্তর পাশে ১২ দশমিক ২৯ একর ভূমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও গবেষণা মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সাতটি অনুষদ, ৪৭টি বিভাগ, মাঠ গবেষণা কেন্দ্রসহ উন্নত মানের গবেষণাগার। এছাড়া রয়েছে একটি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল।
ভাষাশহিদ ও স্বাধীনতার বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ এ ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। এ শহিদ মিনারটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শহিদ মিনারের মধ্যে একটি, যার নামকরণ করা হয়েছে সূর্যালোকে বর্ণমালা। এছাড়া রয়েছে পাঁচটি ছাত্র হল ও দুটি ছাত্রী হল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় চলছে গবেষণা কার্যক্রম, যার স্বীকৃতিস্বরূপ বৈশ্বিক মহামারির (কভিড-১৯) সময়েও আন্তর্জাতিক স্কোপাস ইনডেক্স জার্নালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একশ’র বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় হাওরে জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন এখানকার গবেষকরা। বোরো ফসলনির্ভর হাওরাঞ্চলে একসময় শীতকালেও মাঠের পর মাঠ পতিত থাকত। সুনামগঞ্জের হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে সিকৃবি নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। চলছে মসলাজাতীয় ফসল নিয়ে গবেষণা। উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. শহীদুল ইসলাম আবিষ্কৃত প্রোটিনসমৃদ্ধ ‘সিকৃবি শিম-১’ ও ‘সিকৃবি শিম-২’ জাত দুটি সিলেট অঞ্চলে বছরব্যাপী প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সিলেট অঞ্চলের কৃষি আবহাওয়া-সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য স্থাপন করা হয়েছে অটোমেটেড অ্যাগ্রোমেটিওরোলজিক্যাল স্টেশন। কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণা করে চমক দেখিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এজন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।