Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:10 pm

সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার পেয়েছে। নগরীসহ পাঁচ উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত।

পানি বাড়ছে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায়। এ অবস্থায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজে সেনাসদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।

এদিকে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ জানিয়েছেন, রানওয়ের কাছে বন্যার পানি আসার পর সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষকে উদ্ধার করা এবং নিরাপদে নিয়ে আনা। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এরই মধ্যে সিলেটে কাজ শুরু করেছেন। সুনামগঞ্জেও দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করবেন। প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীকেও কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’

ভারতের মেঘালয়-আসামে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে।

সুনামগঞ্জ শহরে এখন একতলা কোনো বাড়িতে পানি উঠতে বাকি নেই। সদরের পাশাপাশি দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলা ভাসছে বন্যায়।

পানি ঢুকেছে সিলেট শহরেও। জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সদর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন পানির নিচে।

সুনামগঞ্জের পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, শহরের সব রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় আশ্রয় নেয়ার জায়গাও খুব একটা নেই। শহর পুরোটাই ডুবে গেছে।  মানুষ বাড়িঘরে আটকে পড়েছে। আমরা সাধ্যমতো তাদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছি। এ মুহূর্তে প্রচুর নৌকা প্রয়োজন।

দুর্গতদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় স্বেচ্ছসেবীরা। তারাও উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর আর্জি জানিয়েছিলেন।

বন্যায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় এবং অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্গতরা আশ্রয় নেয়ায় সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে এ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৭০ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সে কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে পূর্বাভাসে।

বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ জানান, তিন দিন এই বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট ওঠানামা করবে না। তিনি জানান, বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি বন্যার পানি চলে এসেছে। এছাড়া সিলেটজুড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় তিন দিনের জন্য বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।