শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর নতুন করে কর আইন সংস্কারের ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বৈদেশিক বাজার থেকে দেশে ফেরানো শুরু করেছে দেশটির বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। এরই অংশ হিসেবে এবার বৈশ্বিক লভ্যাংশের প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিসকো। এ ঘোষণায় কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরাই বেশি লাভবান হবেন। খবর সিএনএন।
সিসকোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোম্পানিটির বৈদেশিক লভ্যাংশের প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী মাসেই এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরানো হবে বলে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রাংশ তৈরি করে থাকে।
সিসকোর ফিরিয়ে আনা এ অর্থ থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার অংশ পাবে। ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতায় আসার পর সিসকোই সর্বশেষ বৃহৎ কোম্পানি যারা বৈদেশিক মুনাফার অংশ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা দিল।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলো উচ্চ করহারের কারণে বহির্বিশ্বে থাকা তাদের অর্থ দেশে ফেরানোর বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। তবে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নতুন কর আইনে স্বাক্ষর করার পর এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কংগ্রেসে পাস হওয়া এ আইনের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে বৈদেশিক অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য এককালীন স্বল্পহারে কর প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যের লভ্যাংশের উপর কর প্রদানের ক্ষেত্রেও আর কোনো ধরনের ফাঁকি দিতে পারবে না এসব কোম্পানি।
গত বছরের নভেম্বর মাসের একটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি বৃহৎ কোম্পানি বৈশ্বিক বাণিজ্যের বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার মোট পরিমাণ প্রায় ছয়শ বিলিয়ন ডলার। এ কোম্পানিগুলো হলো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগল, ওরাকল ও সিসকো। সারা বিশ্বের বাণিজ্যে মার্কিন কোম্পানিগুলোর এক দশমিক চার ট্রিলিয়ন ডলারের নগদ বাণিজ্য রয়েছে।
ট্রাম্পের নতুন কর আইনের সমর্থকরা দাবি করেন এর ফলে মার্কিন অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে এবং কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এর বিরোধীতাকারীরাও বিভিন্ন ধরনের যুক্তি তুলে ধরেন। তবে সিসকোর এ ঘোষণায় বিনিয়োগকারীরাও বেশ খুশি। এতে শেয়ার মার্কেটেও কোম্পানিটির অবস্থান বেশ চাঙ্গা হয়েছে।
এর আগে গত মাসে নতুন কর আইনের আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল এককালীন ৩৮ বিলিয়ন ডলার কর পরিশোধের ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলারের ওপর এ কর প্রদানের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া দেশটিতে নতুন একটি ক্যাম্পাসও প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল, যেখানে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে চলতি বছর দেশি পণ্য সরবরাহকারী ও উৎপাদকদের জন্য আরও প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরে ডেটা সেন্টারের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে অ্যাপল। যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
আগামী পাঁচ বছরে নতুন ক্যাম্পাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অবদান রাখবে বলে অ্যাপলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে বিদেশে বিনিয়োগ করা অর্থের মধ্য থেকে ঠিক কী পরিমাণ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।