নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোটকক্ষে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রাখার কারণে ভোটারের গোপনীয়তা ‘কোনোভাবেই নষ্ট হয়নি’ বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল এর ব্যাখ্যায় কমিশন জানিয়েছে, ভোট দেয়ার সময় বুথে ভোটারের সঙ্গে অন্য কেউ প্রবেশ করল কি না, শুধু সেটি ধরা পড়ে ক্যামেরায়, কিন্তু ভোটার কাকে ভোট দিচ্ছেন, সেটি দেখার কোনো সুযোগ নেই।
‘ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে’গণমাধ্যমে আসা অনেকের এমন বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ইসি। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল কমিশনের এই অবস্থান তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের গোপনীয়তা রক্ষায় আইন অনুযায়ী সব ব্যবস্থাই নেয় ইসি।
সম্প্রতি গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের দৃশ্য ঢাকায় বসে সিসিটিভিতে দেখে ভোট বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি নানামুখী আলোচনার জš§ দেয়।কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বসানো হয় এমন সিসি ক্যামেরা। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সে সময় বলেন, ভোটকেন্দ্রের গোপন বুথে সিসি ক্যামেরা ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন বলে আইনজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।’
এ প্রেক্ষাপটে কমিশনের ব্যাখ্যায় বলা হয়, গোপন কক্ষে ভোটার কাকে ভোট দিলেন, তা দেখার কোনো সুযোগ সিসিটিভিতে নেই। গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনের নির্বাচনে ভোটকক্ষে ভোট প্রদানের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ইসি ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল। গোপন কক্ষে ভোটার কাকে ভোট দিলেন, তা দেখার কোনো সুযোগ নেই। তবে গোপনকক্ষে ভোটারের সঙ্গে কেউ প্রবেশ করল কি না বা ভোটার ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করল কি না, একই সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করল কি না, ভোট প্রদানের সময় কেউ উঁকি দিয়ে দেখে কি না, বা পাশে দাঁড়িয়ে কোনো নির্দেশ প্রদান করল কি না, তা দেখা যায়।
নির্বাচনী আইন থেকে উদ্ধৃত করে কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৩১(৭) ধারা অনুযায়ী ভোটার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বা অন্যভাবে এরূপ অক্ষম হলে তিনি কোনো সঙ্গীর সাহায্য ছাড়া ভোট প্রদান করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার ওই ভোটারের পছন্দমতো ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে তার ভোট দিতে সাহায্য করার জন্য গোপন কক্ষে নিতে পারবেন। তার সঙ্গে কোনোভাবেই কোনো ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা, এজেন্ট বা অন্য কেউ গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। অর্থাৎ বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে কোনোক্রমেই ভোট প্রদানের গোপনীয়তা নষ্ট হয়নি।
চলতি বছরে দায়িত্ব নেয়ার পর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন ইভিএমে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচন করেছে। গাইবান্ধার পাশাপাশি জেলা পরিষদ নির্বাচনেও সব কেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে।
কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভোটকক্ষের গোপন বুথে সিসি ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে কারও কারও বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। প্রচারিত বক্তব্যমতে, ভোটকক্ষের গোপন বুথে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে কে কাকে ভোট দিচ্ছে, তা দেখা মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সেই কাজটি করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটদানের পদ্ধতি শেখাতে প্রচার চালানোর কথা তুলে ধরে ইসি বলেছে, একজন ভোটারকে ভোট দেয়ার জন্য গোপনকক্ষে প্রবেশের আগেই সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা ‘ডামি’ ব্যালট ইউনিটে দেখিয়ে দেন কীভাবে ভোট দিতে হবে। কাজেই ভোট কীভাবে দিতে হবে, এটা দেখানোর জন্য ভোটারের সঙ্গে গোপন কক্ষে অন্য কারও প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।
এছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটে, এমন কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য না দিয়ে ইসিকে সহযোগিতা করারও অনুরোধ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।