সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের দরে ফের কারসাজি!

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাঠামোগত পরিবর্তন ও নানা সংস্কারের জন্য উৎপাদন বন্ধ থাকবে। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে এমনটিই ঘোষণা দিয়েছিল সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল। এর আগে থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল নিম্নমুখী। বন্ধ ঘোষণার পর বেশ কিছুদিন ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে হঠাৎ টানা উত্থানে ফেসভ্যালুর ওপরে লেনদেন হচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ার। এদিকে শেয়ারদরের টানা অস্বাভাবিক উত্থানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। বন্ধ কোম্পানির দর বাড়ার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি কোম্পানির কর্তৃপক্ষকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, দর বাড়ার কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই, এমনকি শিগগিরই কোম্পানির উৎপাদন চালু হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। তবে কোনো অসৎ চক্র এটি নিয়ে মেতে উঠেছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন নেই, শেয়ারসংখ্যা কম, মূলধন কম—এমন সব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে একটি অশুভ চক্র মেতে ওঠে। তারা এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়িয়ে বেচাকেনা করে এবং সুযোগ বুঝে মুনাফা হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে। পরবর্তী সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই যেসব কোম্পানির শেয়ারদর টানা অস্বাভাবিক বাড়ছে, সেগুলোর লেনদেন খতিয়ে দেখা উচিত নিয়ন্ত্রক সংস্থার।

এদিকে ঈদের আগেও কোম্পানিটির দরে উল্লম্ফন দেখা গেছে। সে সময় (২১ জুন) শেয়ার বিজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন প্রকাশের পরের দিন লেনদেনে সামান্য পতন হয়। পরে আবারও টানা বাড়তে থাকে কোম্পানির শেয়ারদর।

তথ্যমতে, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ার ১০ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়ে সার্কিট ব্রেকার স্পর্শ করেছে। এদিন আগের দিনের চেয়ে কোম্পানির শেয়ার ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়েছে। এদিন কোম্পানির শেয়ারের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ লিমিট ছিল ১০ টাকা ৭০ পয়সা। আগের দিন কোম্পানির শেয়ার ৯ টাকা ৮০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত এক মাসে কোম্পানির শেয়ার সর্বনিম্ন ৮ টাকা ৮০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ার সর্বনিম্ন ৭ টাকা ৩০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৩ টাকা ১০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।

এদিকে সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১০ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে আয় হয়েছিল ২৭ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ২০ পয়সা।

এদিকে দেশের পোশাক খাতের সংস্কারবিষয়ক দুই জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাকর্ড ও মার্কিন অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণ করতে বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও স্ট্রাকচারাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলকে। এতে প্রতিষ্ঠানটির কারখানার কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে। এ কারণে গত জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানায় কোম্পানির কর্মকর্তারা।

কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, টি-শার্ট, পলো শার্ট, ট্যাঙ্গ টপস, শর্টস, বক্সার, স্কার্ট, লেঙ্গিংস, জ্যাকেট ইত্যাদি উৎপাদন করে সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল। যা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের কাছে রফতানি করা হয়। ইউরোপীয় ক্রেতা জোটের সংগঠন অ্যাকর্ড ও আমেরিকার অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। এতে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির আয়ে। এতে কোম্পানির আয় কমেছে। আর এ মুহূর্তে ক্রেতা সংগঠন দুটির শর্ত পূরণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ক্ষতি হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তাদের শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, ‘শিগগিরই কোম্পানির উৎপাদন শুরু করার সম্ভাবনা নেই। উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও কেন দর বাড়াছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে আমাদের কাছে দর বাড়ার কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত অনুযায়ী কারখানার অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে আমরা জানিয়েছি। এ তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। আর এতে কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে।’

কোম্পানির লভ্যাংশ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্তির বছর কোম্পানিটি ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৬ সালের সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড গেইন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

পুঁজিবাজারে ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ১৬ হাজার। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০