Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:17 am

সীতাকুণ্ডে ঝুঁকিতে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ?

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ছোট-বড় প্রায় ৫৫০ শিল্প-কলকারখানা আছে। এসব শিল্প-কারখানায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে। এসব কল-কারখানা ও শিপইয়ার্ডে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় প্রায় ৬০ শ্রমিক নিহত এবং আহত হয়েছে কয়েকশ শ্রমিক। পাশাপাশি প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। মূলত শিল্পমালিকদের অসচেতনতা ও উদাসীনতা, তদারককারী সংস্থার দায়িত্বে অবহেলা এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার জ্ঞানের অভাবে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে শিল্প ও শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

স্বাধীনতার আগে থেকে বন্দর ও অবস্থানগত সুবিধার কারণে সীতাকুণ্ড উপজেলায় সিমেন্ট, ইস্পাত, ঢেউটিন, জুট মিল, রাসায়নিক দ্রব্য, অক্সিজেন, ওষুধ, জাহাজ ভাঙা শিল্প, কনটেইনার ডিপো, তেল শোধনাগারসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে নানা ঘটনা ও দুর্ঘটনায় প্রতিবছর শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়। এমনকি প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় আট মাস আগে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি ৪৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগে পিটুপি ফার্নিচার গোডাউনে আগুনে এক শিশু নিহত হয়। আর সপ্তাহ আগে সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ঘটনায় সাতজন মারা যান। বেশ কয়েকজন আহত হন। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০ কোটি টাকার অধিক সম্পদ বিনষ্ট হয়। এ তালিকায় সর্বশেষ গত শনিবার যুক্ত ইউনিটেক্স গ্রুপের তুলার গোডাউনে টানা ২০ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে ছাই হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকার তুলা।

সীতাকুণ্ড এলাকার একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেন না। অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করি। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসাসেবাও সুযোগ নেই। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা সীতাকুণ্ড এলাকার প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিত। দরকার হলে মিরসরাই শিল্পাঞ্চলে কারখানাগুলো স্থানান্তর করা উচিত।   

চট্টগ্রামের ডিসি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনার বেশিরভাগেরই মানবসৃষ্ট। সেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, বিস্ফোরণ ঘটছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল খুঁটি শ্রমিক এবং সেই শ্রমিকের নিরাপত্তা, উদ্যোক্তাদের মূলধনের নিরাপত্তা দুটিকেই গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়ম করে কেউ শিল্পকারখানা পরিচালনা করতে পারবে না। নিয়মের মধ্য থেকেই সবাইকে প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে। মানবসৃষ্ট হোক আর প্রকৃতিগত হোক, পরিবেশের দূষণ কীভাবে রোধ করব, দূষণ থেকে খাল-নদী রক্ষা, ভূগর্ভস্থ পানি কীভাবে নিচে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ও পাহাড় কাটা কীভাবে রোধ করা যাবে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মালিকদের মূলধনের নিরাপত্তা আমরা কীভাবে নিশ্চিত করতে

পারি, এর পাশাপাশি সীতাকুণ্ড এলাকায় কীভাবে আমরা একটি মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারবÑসে বিষয়ে সবার মতামত আশা করছি। কর্ণফুলী, আনোয়ারা, মিরসরাই ও হাটহাজারী এলাকায়ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। সে এলাকা নিয়েও আমাদের সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।