সীমান্তে গোলাগুলি থামেনি উৎকণ্ঠা বাড়ছে স্থানীয়দের

প্রতিনিধি, বান্দরবান: বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে গোলাবর্ষণের মাত্রাতিরিক্ত শব্দে বান্দরবান সীমান্ত পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ৯টার পর থেকেই মর্টারশেল ও গোলাবর্ষণের পরিমাণ হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। ৩০ মিনিটের ব্যবধানেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তুমব্রু সীমান্তে বিস্ফোরিত হয়েছে কমপক্ষে ২০টি গোলা। মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষজনও।

তুমব্রু সীমান্তঘেঁষে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক সুমিতা রায় বলেন, এখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু মনের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে। মর্টারশেল উড়ে এসে পড়লে স্বামী-সন্তান ও পরিবারের মানুষের কী হবে? কোনার পাড়ায় মর্টারশেল বিস্ফোরণের পর থেকেই ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছি না। কিন্তু ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোনো স্থান নেই।

এদিকে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বসবাসকারী ৩০০ পরিবারের জন্য জায়গা ঠিক করে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তুমব্রু এলাকাটি দু’ভাগে বিভক্ত করায় সীমান্তঘেঁষে মানুষের বসতি পড়ে গেছে। সীমান্তের এপারে-ওপারে উভয় ভূখণ্ডেই তুমব্রু এলাকা রয়েছে। তুমব্রু সীমান্তের মিয়ানমার অংশে মূলত গোলাগুলি হচ্ছে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর। দুপক্ষের সংঘাতে মাঝেমধ্যেই মর্টারশেল, গোলা এবং ভারী অস্ত্রের গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। স্বাভাবিক মনে হলেও সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে গোলাগুলির শব্দ। তুমব্রু সীমান্তের এপার থেকেই ওপারে পাহাড়ে মর্টারশেল বিস্ফোরণের ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে। সীমান্ত থেকে ৩০০ পরিবারকে সরানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

স্থানীয়দের দাবি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু, আমতলী, ফাত্রাঝিরি ও চাকমাপাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয়দের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বাড়ানো হয়েছে টহলও। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি সীমান্তজুড়ে প্রশাসন, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন। কঠোর নিরাপত্তায় স্থানীয় বাসিন্দারা ঘর থেকে বেরিয়ে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যেতে পারছেন না। 

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সীমান্তের এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। বিভিন্ন প্রস্তাবনাও ঊর্ধ্বতনের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে করণীয় ঠিক করবেন। ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনা মোতাবেক সীমান্ত অঞ্চলের জনসাধারণের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টসংলগ্ন ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এর মধ্যে দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে গোলা নিক্ষেপ করে দেশটি।

এসব ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তিনবার তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবে বলেও তখন হুশিয়ারি দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিন্তু গত শুক্রবার মর্টারশেল ও ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে হতাহতের পর উদ্বেগ বেড়ে যায়। এ ঘটনায় এক মাসে চতুর্থবারের মতো গত রোববার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পরও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০