নিজস্ব প্রতিবেদক: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার হঠাৎ করে শক্তি বৃদ্ধি করেছে। এতে নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিকে পতাকা বৈঠকের বার্তা পাঠানো হয়েছে। এদিকে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘মিয়ানমারের শক্তিবৃদ্ধির বিষয়টি অত গুরুত্ব দিয়ে দেখার কিছু নেই।’
বিজিবির প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের জন্য চট্টগ্রাম সফরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মিয়ানমার দাবি করেছে, জিরো লাইনে অবস্থান নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যাতে আর বাংলাদেশে না ঢোকে সেজন্যই তারা নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। ১৯৭৮, ১৯৯১, ২০১৬ সালেও এ ধরনের ঘটনা দেখেছি, ২০১৭-১৮-তেও দেখছি। তারা যা বলেন, তা তারা করেন না। আজকে তারা যে এক্সকিউজ দিতে চাচ্ছেন, তা ভুল দিচ্ছেন। এগুলো আমরা দেখেছি। বিজিবি অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের এলাকায় তাদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। দেশের ভেতরে এসে কেউ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করবে, এটা অসম্ভব।’
এদিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা অন্তত ১৭ হাজার রোহিঙ্গা বান্দরবান সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায়। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মিয়ানমার আশ্বস্তও করেছিল।
বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের সরে যেতে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল। এর মধ্যে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে হঠাৎ তুমব্রু সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করে মিয়ানমার। বেশ কিছু সামরিক পিকআপ, ট্রাক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিপুলসংখ্যক বিজিপি সদস্যরা শূন্যরেখার ভেতরে অবস্থান নেয়। কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নিয়ে টানা কয়েক ঘণ্টা মাইকিং করে তারা রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরওয়ার কামাল জানান, ‘সীমান্তের কোনাপাড়া নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বিজিবি ও প্রশাসন।’
ওই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ‘কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের পুলিশ আর সেনাবাহিনী রাতের বেলায় ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘরে খালি মদের বোতল আর ঢিল ছুড়ে মারছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে তারা গাড়ি করে অনেক লোক এনেছে। আমরা বাঁচতে চাই, মিয়ানমারে ফিরে গেলে আমাদের হত্যা করা হবে।’
বিজিবির বান্দরবান সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগেও মিয়ানমার তাদের সীমান্তে লোকবল বাড়িয়ে আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এবার তুমব্রু সীমান্তে এত বেশি শক্তি বৃদ্ধির কারণ স্পষ্ট নয়। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবির পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
এদিকে সীমান্তে উত্তেজনার খবরে গতকাল বিকালে ঢাকায় পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বর্ডার এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন, সেনা সমাবেশÑএগুলো বর্ডার নর্মসের বাইরে। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সতর্ক অবস্থানে আছি। যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিজিবি সব সময়ই দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। বিজিবির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি একটি প্রতিবাদলিপিও পাঠানো হয়েছে বিজিপিকে।’
শূন্যরেখায় আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে মিয়ানমার এমন তৎপরতা চালাচ্ছে কি নাÑএমন প্রশ্নে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন আগেও তারা মাইকিং করেছিল যে, ‘বাংলাদেশি হয়ে’ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের এলাকায় থাকতে পারবে না। এটা এক ধরনের পুশ-ইনের চেষ্টাই বলা যায়। তবে আমি বলব, উচ্চপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ অনেকটাই প্রসারিত হয়েছে। আশা করি দ্রুতই এটার নিষ্পত্তি হবে।
পরিস্থিতি এমন হয়নি যে অন্য ফোর্সকে ইনভল্ভ করতে হবে। এখনও পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এটা উসকানির কোনো পর্যায়ে পড়ে না। তারা কী কারণে সেনা মোতায়েন করল তা ফ্ল্যাগ মিটিংয়েই জানা যাবে।’