যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে যে সিদ্ধান্ত নিলাম, রিপাবলিকানরা আজ পর্যন্ত তা করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের কর্তব্য: প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিবাসন আইন প্রয়োগকে জোরদার করার লক্ষ্যে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করার পর, চলতি সপ্তাহে হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসের কথা জানায়। খবর: ভয়েস অব আমেরিকা।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাঞ্জেলো ফার্নান্দেজ হার্নান্দেজ এক বিবৃতিতে বলেন, আগস্টে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সীমান্তে প্রবেশের ঘটনা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বাইডেনের ৪ জুনের নির্বাহী আদেশের পর থেকে সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যা ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন অনুসারে, আগস্টে দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে প্রবেশ বন্দরগুলোয় প্রায় ৫৮ হাজার অভিবাসী হাজির হন। এ সংখ্যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার। এই হিসেবে এ বছরে কমেছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।
দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৩ হাজার। এই সংখ্যার মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার অভিবাসী সিবিপি ওয়ান নিবন্ধন ছাড়াই প্রবেশ বন্দরে আসেন।
উল্লেখ্য সিবিপি ওয়ান হল একটি মোবাইল অ্যাপ যার মাধ্যমে অভিবাসীরা অবৈধভাবে অতিক্রম করার পরিবর্তে প্রবেশ বন্দরে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্মকর্তারা বলেন, অ্যাপটি সীমান্ত প্রক্রিয়া সুবিধাজনক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আগস্টে সিবিপি ওয়ান ব্যবহার করে প্রায় ৪৪ হাজার ৭০০ জনের আশ্রয়ব্যবস্থা প্রক্রিয়া করা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারীতে অ্যাপটি চালু হওয়ার পর থেকে ৮ লাখ ১৩ হাজার জনের বেশি মানুষ সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত করেছে।
গত জুনেই মেক্সিকো সীমান্ত নিয়ে কঠোর অবস্থান নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অভিবাসন প্রত্যাশীদের আর ঢুকতে দেয়া হবে না যুক্তরাষ্ট্রে। জো বাইডেন তখন একটি অর্ডারে সই করেন। তাতে বলা হয়েছে, মেক্সিকো সীমান্তে দৈনিক আড়াই হাজারের বেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী গ্রেপ্তার হলে সীমান্ত অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে। যেহেতু এই মুহূর্তে সংখ্যাটি এর চেয়ে বেশি, ফলে অর্ডার সই হওয়ার পরেই সীমান্ত সিল করে দেয়া হয়। অর্থাৎ, অভিবাসন প্রত্যাশীরা মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আর প্রবেশ করতে পারবেন না।
অর্ডারে আরও বলা হয়েছে, কেউ অনুপ্রবেশ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডিপোর্ট করা হবে। ফলে তাদেরকে মেক্সিকোয় ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনোরকম ইমিউনিটি বা সুযোগ দেয়া হবে না। সীমান্তে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আবার দেড় হাজারের নিচে নামলে ফের এই অর্ডার বদল করা হবে বলে জানানো হয়েছে।তবে অভিভাবকহীন নাবালকেরা অবশ্য এই আইনের অন্তর্গত নয়। অর্থাৎ, তাদের জন্য এই নিয়ম প্রযোয্য নয়। তবে পরিকল্পনা করে নিয়ম মেনে কেউ শরণার্থী হওয়ার আবেদন করতেই পারেন। কিন্তু অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা যাবে না। এদিন এই অর্ডারে সই করে হোয়াইট হাউসে বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে আজ যে সিদ্ধান্ত নিলাম, রিপাবলিকানরা আজ অবধি তা নিয়ে উঠতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের কর্তব্য।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্মকর্তারা বলেন, জুনের কার্যনির্বাহী পদক্ষেপ অভিবাসী অপসারণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে। জুন থেকে ১ লাখ ৩১ হাজার জনের বেশি মানুষকে ১৪০টির বেশি দেশে নির্বাসিত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে প্রায় ৪০০টি আন্তর্জাতিক প্রত্যাবাসন ফ্লাইট চলাচল করেছে।
২০২২ সালে বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে লাখ লাখ অবৈধ বিদেশিকে অবাধে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়ার। এটি আর কোনো রাখঢাক করার ব্যাপার নয় যে বাইডেন প্রশাসনের দেড় বছরে আমেরিকান ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল সীমান্ত সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে তার সমালোচকরা এটিকে নজীরবিহীন সীমান্ত সঙ্কট বলে বর্ণনা করেন। আইন লংঘনকারীদের সিবিপি তালিকাভূক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে।