নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশি হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিন্সিপল হচ্ছে, বর্ডারে যেন একজনও মৃত্যুর সম্মুখীন না হন। ভারত সরকার সেটায় একমত হয়েছে, আমরা চাই একজনও সেখানে মারা যাবে না। কিন্তু হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতো আমরাও উদ্বিগ্ন।’
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ৩৭ জন এবং তাদের শারীরিক নির্যাতনের কারণে ছয় জনসহ মোট ৪৩ জন মারা গেছেন। এই সংখ্যা ২০১৮ সালে ছিল ১৪ জন এবং ২০১৭ সালে ২৪ জন।
গত শনিবার লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্তে এক বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে এবং ঠাকুরগাঁও সীমান্তে আরেকজনকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। সীমান্তে সর্বশেষ দুই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভারতের কাছে বার্তা পৌঁছাব, যাতে তারা তাদের পূর্বের অঙ্গীকার রক্ষা করে যে, সীমান্তে একজনও মারা যাবে না।’
এদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে পড়তে আসতে ইচ্ছুক ৩৫০ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশের ভিসা পাচ্ছেন না বলে সম্প্রতি খবর প্রকাশ করেছে ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। ওই খবরকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘এটা একেবারে মিথ্যা তথ্য, মিথ্যা খবর। যেটা আজকে (রোববার) বের হয়েছে পেপারে ভারত থেকে যে, কাশ্মীর থেকে কিছু ছেলেমেয়ে আসার কথা, তাদের নাকি আমরা ভিসা দিচ্ছি না। এটা একেবারে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য। আমরা অবশ্যই তাদের ভিসা দিই। এটা সত্যি নয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মন্ত্রী। ‘আবুধাবি সাসটেইনেবিলিটি উইক’, ‘জায়েদ সাসটেইনেবিলিটি অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি’সহ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিন দিনের সরকারি সফরে গতকাল বিকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আরব আমিরাতের বাজার খোলা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (এর আগে) সেখানে যাওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত শ্রমবাজার খুলতে রাজি হয়েছে। প্রায় ছয় বছর বন্ধ ছিল, এরপর তারা নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে, লোক নেবে। বিভিন্ন ধরনের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে। তারা দক্ষ লোক পাঠানোর কথা বলছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো পুরোপুরি (বাজার) খোলা হয়নি। তবে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর আবুধাবি সফরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ‘ত্বরান্বিত’ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন ধরনের ইস্যুগুলো বের হয়েছে। আমাদেরও ইস্যু আছে। আমরা বিনিয়োগ বাড়াতে চাই, বাণিজ্য বাড়াতে চাই, জনবলের আরও মানসম্মত কাজে সম্পৃক্ততা চাই। সম্প্রতি কিছু কিছু অসুবিধা হচ্ছে, সেগুলোয় আমাদের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীও যাবেন এবং রাষ্ট্রদূতরাও তুলে ধরবেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কী কী করব, সেগুলো জানাব।’
পরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোয় নিয়োজিত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেবেন এবং তারাও তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন।