নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু জাতিসংঘে তুলতে ভারতের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়গুলো গতকাল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে ফের জানানো হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
বৈঠক শেষে মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে এটা জানিয়েছি। সামনে বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক হবে। সেখানে এ বিষয়টি তোলা হবে বলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, দু’দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য খুব শিগগিরই যৌথ পরামর্শক সভার (জেসিসি) আয়োজন করা হবে। দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত সহজ করার জন্য এয়ার বাবল চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ভারতের কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, ‘হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার ঢাকা সফরকে একটা ব্রেক থ্রু হিসেবে দেখছি। করোনার সময় যেহেতু বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক নেই কোনো দেশেরই। সেটার একটা ব্রেক থ্রু হিসেবে আমরা দেখছি এই ভিজিটটাকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেই এখানে এসেছেন তিনি। তিনি আমাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দিল্লিতে যাওয়ার জন্য। জয়েন কনসালট্যান্ট কমিটির মিটিং হবে, তার আগেই হয়তো আমি একবার যাব।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দুই দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে আমরা যেসব তথ্য দেখতে পেয়েছি সে বিষয়ে পরস্পরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি এবং সম্পর্ককে আরও বেগবান করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।’
বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুত দেশে ফেরার ব্যাপারে তিনি সহযোগিতা করবেন। তাবলিগ জামাতে যারা গিয়েছিল সেখানে বেশ কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি ছিল। তাদের একটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তারা ছাড়ছে। অলরেডি কিছু বাংলাদেশি ফিরেও এসেছে। যার সংখ্যা ১০০-এর কাছাকাছি। আরও এরকম শতাধিক ভারতে রয়েছে। তাদের ব্যাপারে যতটুকু পারা যায় সেই সমস্যারও সমাধান করব।’
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য পদ পেয়েছে এ বছর। আমরা সমর্থন করেছি। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তারা নিরাপত্তা পরিষদে বসবে। নিরাপত্তা পরিষদে বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচিত হয়। আমাদের একটা কনসার্ন আছে, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা অনেক চেষ্টা করে এসেছি, যাতে নিরাপত্তা পরিষদে একটা রেজুলেশন পাস করা যায়। আমরা ভারতের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চেয়েছি।’
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ১৮ আগস্ট দু’দিনের সফরে ঢাকায় আসেন শ্রিংলা। তিনি বাংলাদেশেও দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার পর এটি ঢাকায় তার দ্বিতীয় সফর। সফরকালে মঙ্গলবারে রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন শ্রিংলা। এর আগে গত ২ মার্চ দু’দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।