ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণে দুভাগে বিভক্ত হলেও বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে। আর আধুনিক বিশ্বে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মূল চালিকাশক্তি নির্ভর করে প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার ওপর, যে বিষয়টি ইউরোপে ইউরো জোন প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব এশিয়ায় আসিয়ান প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি আঞ্চলিক ব্লকে এগিয়ে যেতে হলে ‘একত্রে বিকশিত হওয়ার’ নীতি অনুসরণ করার কোনো বিকল্প নেই প্রতিবেশী দেশগুলোর। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিগতভাবে পরস্পরের সঙ্গে অত্যন্ত সংগতিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এসব দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য জোরদার হয়ে ওঠেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন হয়, তার মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম সম্পন্ন হয় আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে। অথচ আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এ ধরনের বাণিজ্যের পরিমাণ ৪০ শতাংশের ওপরে। এমনকি ইউরোপের ইইউ জোটের দেশগুলোর মধ্যেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আন্তঃবাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধিকরণ এবং দুদেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ জোরদার করতে সীমান্ত হাট একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু নানা ধরনের শর্তের কারণে এ উদ্যোগ তেমন সফল হয়নি। বাজারের নানা অনিয়ম রোধকল্পে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার উপস্থিতি দোষের নয়। কিন্তু সেসব নীতিমালা যদি বাণিজ্যের মূল দর্শনের বাস্তবায়নকেই বাধাগ্রস্ত করে, তাহলে সে ধরনের নীতিমালা অর্থহীন বৈ কিছু নয়। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত হাটের এই যুগোপযোগী উদ্যোগকে ফলপ্রসূ করতে হলে লাগসই নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল প্রকাশিত ‘ফেনীর সীমান্ত হাটে বেচাকেনায় হতাশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হাটে বেচাকেনায় অংশ নিতে নির্দিষ্ট প্রবেশ কার্ড প্রয়োজন হয়। এছাড়া সীমান্তের নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে উৎপাদিত কোনো পণ্য সেখানে বিকিকিনি করা যায় না। এমন কঠিন শর্তের বেড়াজালে প্রকৃতপক্ষে ভালো বাণিজ্য পরিচালনা সম্ভবপর নয়। এমন শর্ত ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ ধারণার পরিপন্থি বৈকি। কাজেই এ হাট যাতে প্রকৃত অর্থে দুদেশের মধ্যে একটি সুচারু বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রসারে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে টানাপড়েন থাকলেও বাণিজ্যের বিষয়ে তারা অভিন্ন নীতির অনুসরণ করার মাধ্যমে আঞ্চলিক সমৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও রাজনৈতিক বিরোধ আছে। সেই বিরোধ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে সমাধান হওয়া শ্রেয়। আর বাণিজ্যকে বাণিজ্যের গতিতে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দেয়া আবশ্যক। তাহলেই কেবল দ্রুততার সঙ্গে সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে। এমন সমৃদ্ধি অর্জনে সাফটার মতো চুক্তি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। কাজেই সার্ক ও সাফটার মতো বিষয়কে দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থেই আরও বেশি শক্তিশালী করা আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সদয় দৃষ্টি দেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।